Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

আমার মেয়ে কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না

খাদিজাকে কখনো সেলে (দুর্ধর্ষ অপরাধীদের যেখানে রাখা হয়) রাখা হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে জেলার ফারহানা আক্তার বলেন, ‘এটা অনেক আগের কথা। বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার জন্য একটি ঘরকে সেল বানিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছিল। তবে কনডেমড সেল (ফাঁসির আসামিদের যেখানে রাখা হয়) নয়, সাধারণ সেল।’

খাদিজা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তাঁর ছোট বোন সিরাজুম মুনিরা মা ফাতেমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে কখনো ছুটেছেন থানায়, কখনো আইনজীবীর কাছে। এখন আদালতের বরান্দা আর কারাফটক তাঁর নিয়মিত গন্তব্য হয়ে গেছে। খাদিজার বাবা বিদেশে থাকেন।

কারাগারে খাদিজাতুল কুবরার পরিচয় এখন ‘রাইটার’। কারারক্ষীদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করা, বিশেষ করে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের সময় লিখে রাখা, কোন বন্দী কবে স্বজনের দেখা পাবেন—এসব লিখে রাখেন তিনি; পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ শিখছেন। এ ছাড়া লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি এমন বন্দীরাও তাঁর কাছ থেকে নাম লেখা শিখছেন। কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে খাদিজা সম্পর্কে এসব বিষয় জানা গেছে।

খাদিজার হাতের লেখা সুন্দর, তাই তাঁকে দিয়ে লেখালেখির কাজ (বিভিন্ন নথিপত্র লেখা) বেশি করানো হয়, তিনি নিজেও এই কাজ করতে পছন্দ করেন বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।

কারাসূত্র বলছে, এক বছর ধরে খাদিজাতুল কুবরার ‘বসবাস’ গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের কলমিলতা ভবনের ২০৩ নম্বর কক্ষে। তাঁর সঙ্গে একই কক্ষের মেঝেতে গাদাগাদি করে থাকেন আরও ২২ জন বন্দী।

‘বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করব।’

আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

খাদিজাতুল কুবরা

খাদিজাতুল কুবরাছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত এক বছরে তাঁর আর জামিন হয়নি।

খাদিজাকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে এক বছর ধরে বন্দী থাকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করব।’

কারা সূত্র জানায়, গতকাল সকালে খাদিজা কারারক্ষীদের বলেছেন, আজ (গতকাল) তাঁর একটি বিশেষ দিন। একই কথা বলেছেন তাঁর সহপাঠীদেরও (সহবন্দী)। অনেকে ভেবেছেন, তাঁর জন্মদিন। কিন্তু খাদিজা মলিন মুখে তাঁদের জানিয়েছেন, কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আসার এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ (রোববার)।

কারা সূত্র এবং তাঁর স্বজনেরা (যাঁরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন) বলছেন, খাদিজা অন্য বন্দীদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন, কেউ তাঁর সঙ্গে কথা না বললে অনেকটা অস্থির হয়ে যান। তবে মাঝেমধ্যে বিষণ্ন হয়ে পড়েন। কখনো কারাগার থেকে বের হতে পারলেও আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তাঁর সঙ্গে বন্ধুরা আগের মতো ব্যবহার করবেন কি না, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সহযোগিতা করবে কি না—এসব দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাঁর। কেন তাঁর জামিন হচ্ছে না—এটি ভেবেও প্রায়ই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মা, বোন ও বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে তাঁর।

‘যতবার বোনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আমার কাছে জানতে চেয়েছে, কবে তার জামিন হবে? সে আবার পড়ার টেবিলে পড়তে চায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে লেখাপড়াটা শেষ করতে চায়।’

সিরাজুম মুনিরা

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খাদিজা সারা দিন তাঁর মায়ের গল্প করেন। খাদিজা এই গল্পও করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মা মাঝেমধ্যে তাঁকে ভাত খাইয়ে দিতেন, জামাকাপড় ধুয়ে দিতেন। এখন সব নিজে করতে শিখেছেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, খাদিজার ছোট বোনই বেশি দেখা করতে আসেন। কারাগারে ১৫ দিন পরপর বন্দীরা তাঁদের স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। আর সপ্তাহে এক দিন ১০ মিনিট স্বজনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে পারেন।

খাদিজা কারাগারে কেমন আছেন—এই প্রশ্নে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারাগার তো কারাগারই। তবে মেয়েটা খুব মেধাবী। নিজেকে ব্যস্ত রেখে ভালো থাকতে চেষ্টা করে, কাজ শিখে সময় কাটায়। সে নিজের জামাকাপড় নিজেই সেলাই করে। লেখালেখি করে, বন্দীদের হিস্ট্রি (প্রয়োজনীয়
 তথ্য) লেখে।’

কারা সূত্র জানায়, গত ২০ মার্চ খাদিজার বিরুদ্ধে কারা কর্তৃপক্ষ একটি অভিযোগ আনে। এর আগে গত ১৪ মার্চ তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁর অসহযোগিতার কারণে কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করে কারা কর্তৃপক্ষ। সে জন্য তাঁকে সাত দিন সেলে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

‘দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংসার। খাদিজা লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী ছিল। সেই মেয়েকে এক বছর ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে। জামিনও হচ্ছে না। আমার সঙ্গে কথা হলে কেবলই সে কাঁদে। আমার মেয়ে কি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না?’

ফাতেমা খাতুন

খাদিজাকে কখনো সেলে (দুর্ধর্ষ অপরাধীদের যেখানে রাখা হয়) রাখা হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে জেলার ফারহানা আক্তার বলেন, ‘এটা অনেক আগের কথা। বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার জন্য একটি ঘরকে সেল বানিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছিল। তবে কনডেমড সেল (ফাঁসির আসামিদের যেখানে রাখা হয়) নয়, সাধারণ সেল।’

খাদিজা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তাঁর ছোট বোন সিরাজুম মুনিরা মা ফাতেমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে কখনো ছুটেছেন থানায়, কখনো আইনজীবীর কাছে। এখন আদালতের বরান্দা আর কারাফটক তাঁর নিয়মিত গন্তব্য হয়ে গেছে। খাদিজার বাবা বিদেশে থাকেন।

সিরাজুম মুনিরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতবার বোনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আমার কাছে জানতে চেয়েছে, কবে তার জামিন হবে? সে আবার পড়ার টেবিলে পড়তে চায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে লেখাপড়াটা শেষ করতে চায়।’

কারাগার থেকে সর্বশেষ ২১ আগস্ট মা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন খাদিজা। তখন কিডনিতে সমস্যার কথা মাকে বলেছেন তিনি।

ফাতেমা খাতুন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংসার। খাদিজা লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী ছিল। সেই মেয়েকে এক বছর ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে। জামিনও হচ্ছে না। আমার সঙ্গে কথা হলে কেবলই সে কাঁদে। আমার মেয়ে কি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না?’

খাদিজাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হোক। মামলা দুটি প্রত্যাহার করুক। আমি ন্যায়বিচার চাই।’

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.