Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

চিরকুট লিখে কেন দলে দলে ফিলিস্তিনি কিশোর-তরুণ প্রাণ দিচ্ছে

দিনটি ছিল আর দশটা দিনের মতোই। সেদিনও আমরের শহর বেথলেহেমে হানা দেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁদের লক্ষ্য করে অন্যদের সঙ্গে আমরও পাথর ছোড়ে। ইসরায়েলি সেনাদের ছোড়া বুলেট কেড়ে নেয় তার প্রাণ।

আমর খামৌরের বয়স হয়েছিল সবে ১৪ বছর। বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে দিন কাটছিল তার। তবে তার মনে ছিল মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে রক্ষায় লড়াইয়ের দৃঢ় সংকল্পও। আমরের এ সংকল্পই তাকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর দুয়ারে।

গত জানুয়ারিতে ইসরায়েলি সেনাদের ছোড়া দুটি বুলেটে মৃত্যু হয় আমরের। ছেলের মৃত্যুর পর মা–বাবা আমরের মুঠোফোনে হাতে লেখা এক চিরকুটের ছবি পায়। চিরকুট জানায়, মৃত্যুকে বরণ করতে প্রস্তুত ছিল আমর।

দিনটি ছিল আর দশটা দিনের মতোই। সেদিনও আমরের শহর বেথলেহেমে হানা দেন ইসরায়েলি সেনারা। তাঁদের লক্ষ্য করে অন্যদের সঙ্গে আমরও পাথর ছোড়ে। ইসরায়েলি সেনাদের ছোড়া বুলেট কেড়ে নেয় তার প্রাণ।

আমর খামৌরের বয়স হয়েছিল সবে ১৪ বছর। বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে দিন কাটছিল তার। তবে তার মনে ছিল মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে রক্ষায় লড়াইয়ের দৃঢ় সংকল্পও। আমরের এ সংকল্পই তাকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর দুয়ারে।

গত জানুয়ারিতে ইসরায়েলি সেনাদের ছোড়া দুটি বুলেটে মৃত্যু হয় আমরের। ছেলের মৃত্যুর পর মা–বাবা আমরের মুঠোফোনে হাতে লেখা এক চিরকুটের ছবি পায়। চিরকুট জানায়, মৃত্যুকে বরণ করতে প্রস্তুত ছিল আমর।

১৯৬৭ সালের পর থেকে দখলকৃত ভূখণ্ডের আট লাখ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ শিশু। কোনো অভিযোগ ছাড়াই দণ্ড দেওয়া হয় এবং হেফাজতে রাখা অবস্থায় তাদের ওপরে পাশবিক নির্যাতনও চালান সেনারা

—ফ্রান্সেসকা আলবানিজ, বিশেষ দূত, ইউএনএইচসিআর

সেই চিরকুটে আমর লিখে রেখেছিল, ‘আমি যদি কোনো দিন শহীদ হিসেবে তোমাদের কাছে ফিরে আসি, তাহলে তোমরা কাঁদবে না। আমার সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেবে। কষ্ট পেয়ো না। আমি শহীদ হতে চেয়েছিলাম, তাই হয়েছি।’ চিরকুটের শেষে কৈশোরের প্রিয়তমাকে ভালোবাসা জানিয়ে আমর আরও লিখেছে, ‘কারিওয়ান, আল্লাহ যাকে আমার প্রিয়তমা করে পাঠিয়েছে।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে যেসব ফিলিস্তিনি কিশোর-তরুণকে প্রাণ দিতে হয়েছে, তাঁদের অনেকেই আমরের মতো এমন ‘চিরকুট’ লিখে রেখেছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ রেখে গেছেন ভিডিও চিত্র, যাতে হামলার দায় স্বীকার করার কথা বলে গেছেন তাঁরা। এসব ভিডিওতে তাঁরা এ-ও বলে গেছেন, এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ যে যেতে পারে, তা আগেই তাঁদের জানা।

বর্তমানে আমরের মতো যে ফিলিস্তিনি কিশোর-তরুণেরা ওই ভূখণ্ডের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত নন, কিন্তু ইসরায়েলের সেনাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে চান, তাঁদের অনেকে এভাবে চিরকুটে শেষ কথা লিখে রাখছেন। এসব চিরকুট তাঁরা লিখছেন তাঁদের প্রিয়জনদের কাছে। এতে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ যেমন থাকছে, তেমনি থাকছে উপদেশও। এসব চিরকুটকে বলা হচ্ছে ‘উইল’। তবে এর লেখকেরা কোনো বস্তু রেখে যাচ্ছেন না। অনেকে চিরকুটে ‘শেষ কথা’ লিখতে গিয়ে আঁকিবুঁকি বা হিজিবিজি লিখছেন, যেন অনাগত ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে কিছুই বলার নেই তাঁদের।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের মুখে কিশোর-তরুণদের অনেকেই যে মৃত্যুকে ‘বীরোচিত’ একটি কাজ হিসেবেই দেখছেন, এসব চিরকুটই তার প্রমাণ। তাঁরা মনে করছেন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁদের জীবন কোনো অর্থ খুঁজে পাবে আর এভাবে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ছাড়া তাঁদের আর করার কিছুই নেই। কারণ, দখলকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিনিয়ত রক্তক্ষয়ী হামলা, সাঁড়াশি অভিযান ও নানাভাবে নিপীড়ন চালাচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা।

জেরিকোতে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনি কিশোরের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ। গত মে মাসে তোলা

জেরিকোতে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনি কিশোরের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ। গত মে মাসে তোলাছবি: রয়টার্স

বিষয়টা এমন নয় যে তাঁরা মরে যেতে চান। বরং তাঁরা মনে করছেন, আত্মবিসর্জন ছাড়া তাঁদের কাছে মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে দেওয়ার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই

—জালাল আবু খাতার, লেখক, পশ্চিম তীরের বাসিন্দা

এ মাসের শুরুতে পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বেপরোয়া সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। একদিকে ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে ঢোকে, অন্যদিকে ড্রোন ও হেলিকপ্টার দিয়ে চালানো হয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। জেনিনের ১২ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর ৪৮ ঘণ্টার অভিযানের সমাপ্তি টানেন ইসরায়েলের সেনারা। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে অন্তত ১৫৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

দিনের পর দিন ইসরায়েলের সহিংস অভিযান-হামলা যতই বাড়ছে, ততই ফিলিস্তিনি কিশোর-তরুণদের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ার তাগিদও বাড়ছে। তাঁদের মনে হচ্ছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে আরও যুক্ত করতে হবে নিজেকে। নিজের অবস্থান থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।

ফিলিস্তিনি সমাজে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে কেউ নিহত হওয়া মানেই সে ‘শহীদ’ এবং সিংহের মতো লড়াই করে প্রাণ দেওয়া এসব ফিলিস্তিনিই সত্যিকারের বীর। ফিলিস্তিনিদের এ ধারণা দীর্ঘ দিনের। যাঁরা ‘শহীদ’ হয়েছেন, দেয়ালে ও ব্যানারে তাঁদের ছবি দেখা যায়। তাঁরাই হয়ে ওঠে সবার অনুপ্রেরণা।

মৃত্যুর আগে কিশোর-তরুণদের রেখে যাওয়া এসব চিরকুটের খবর ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যমে তেমন প্রকাশিত না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঠিকই ভেসে বেড়ায়। এর উদ্দেশ্য অন্য ফিলিস্তিনি তরুণেরাও যেন মাতৃভূমি রক্ষার এ লড়াইয়ে অংশ নিয়ে এমন কিছু করতে উৎসাহী হন।

সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনি তরুণদের রেখে যাওয়া চিরকুটের মধ্যে কিছু চিরকুটে লেখা ছিল—উদয় আল-তামিমি। সওফাত শরণার্থীশিবিরের মূল ফটকে ইসরায়েলের একটি তল্লাশিচৌকি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পর দৌড়ে পালানোর সময় পাল্টা গুলিতে মৃত্যু হয় ২২ বছরের তরুণ তামিমির। চিরকুটে তিনি লেখেন, তাঁর এ হামলা ‘সংগ্রামের মহাসাগরে মাত্র এক বিন্দু জল’।

পশ্চিম তীরের জেনিনে শোকার্ত নিহত শিশু জানা মাজদির স্বজনেরা। ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর

পশ্চিম তীরের জেনিনে শোকার্ত নিহত শিশু জানা মাজদির স্বজনেরা। ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বরছবি: রয়টার্স

শিশুদের এভাবে মারধর ও উলঙ্গ করার ঘটনার বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে তাদের সঙ্গে। তাদের ভবিষ্যৎ এভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে

—জেসন লি, পরিচালক, সেভ দ্য চিলড্রেন

উদয় আল-তামিমি সেই চিরকুটে আরও লিখেছিলেন, ‘আমি জানি, আজ নয়তো কাল আমার মৃত্যু হবে।

আর আমি এ-ও জানি, এ হামলা চালিয়ে আমি আমার মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করতে পারব না।

কিন্তু একটা উদ্দেশ্য থেকে আমি এ হামলা চালিয়েছি, যাতে আমার এ হামলার পর আরও শত শত তরুণ অস্ত্র নিয়ে আমার পেছনে এসে দাঁড়ায়, এক হয়ে লড়াই করে।’

আমরের মৃত্যুর দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে একইভাবে ইসরায়েলি সেনাদের এক অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় তার বন্ধু আদম আয়াদ (১৫)। আমরের মতোই ইসরায়েলি সেনারা অভিযান চালাতে এলে সে–ও ঘর থেকে বের হয় এবং ইসরায়েলি সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। পরে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে মৃত্যু হয় তার।

আদমের মৃত্যুর এক মাস আগের ঘটনা। তার মা ওয়াফা আয়াদ আদমের ঘরে একটি চিরকুট পান। সে–ও আমরের মতো চিরকুটে একই ধরনের কথা লিখেছিল। চিরকুট পাওয়ার পর আদমের মা তার কাছে আকুতি জানান, যেন সে এমন কোনো চিরকুট আর লিখে না রাখে। কিন্তু মায়ের অবাধ্য আদম মৃত্যুর আগে এমন আরও চিরকুট লিখেছিল। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আদমের পকেটে আরও এক চিরকুট পাওয়া যায়।

সেই চিরকুটে আদম লিখেছিল, ‘আমি অনেক কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা এমন এক জায়গায় বাস করি, যেখানে নিজের স্বপ্ন পূরণ করা অসম্ভব। শহীদ হওয়া মানেই জয়ী হওয়া। এটা সত্য যে এর মধ্য দিয়ে একজনের জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু অন্তত শান্তি নিয়ে হলেও তো চলে যাওয়া যাবে।’

আদমকে সমাহিত করা হয় শহীদ নামের একটি কবরস্থানে। আদমের মৃত্যুর কয়েক দিন পর তার কবর দেখতে যায় আমর। সেখানে গিয়ে আমর বন্ধুদের বলেছিল, সে মারা গেলে আদমের কবরের পাশে যেন তাকে কবর দেওয়া হয়।

ছেলের মৃত্যুর পর মাঝেমধ্যে তার কবরের পাশে যেতেন আমরের মা। এ সময় আমরের বন্ধুরাও তাঁর সঙ্গে যেত। আমরকে সমাহিত করা হয়েছিল ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে সে তাকে সমাহিত করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল বন্ধুদের। আমরের কবর তত দিনে নানা ধরনের ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। আমরের মতো তার বন্ধুরাও অনেকে চিরকুট লিখে রেখে যাওয়ার কথা জানিয়ে ইঙ্গিত দেয়, তারাও আমরের মতো জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। কেউ কেউ এ–ও বলে, কোথায় সমাহিত হতে চায়, তারা সেটা জানিয়ে রেখেছে।

এসব জানতে পেরে এই কিশোরদের হৌশিয়া নামের স্কুলশিক্ষক ছাত্রদের জড়ো করে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মানেই যে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। এই প্রতিরোধ পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্য দিয়েও করা যেতে পারে। তিনি ছাত্রদের বলেন, তারা যেন এভাবে চিরকুট না লেখে। এর বদলে তারা যেন পড়াশোনায় মনোযোগী হয়।

তবে হৌশিয়ার এ কথায় যে তাঁর সব ছাত্র একমত ছিল, তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ পাল্টা জবাবে বলে, ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি মাতৃভূমি চাইলে এমন বিসর্জনের দরকার আছে। কেউ কেউ জানায়, তারাও চিরকুট লিখে রেখেছে।

ছাত্রদের মধ্যে এমন আত্মঘাতী প্রবণতা নিয়ে হৌশিয়ার প্রশ্ন, ‘১৩ বছরের একটা শিশু কেন ভবিষ্যৎ ভাবনার আগেই নিজের মৃত্যুর কথা নিয়ে ভাববে?’

ফিলিস্তিন সরকারের মানসিক স্বাস্থ্য শাখার প্রধান ডা. সামা জাব্র বলেন, ইসরায়েলের দখল করা ভূখণ্ডে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের একের পর এক প্রজন্ম যে মারাত্মক এক প্রহসনের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে আসছে, কিশোর-তরুণদের রেখে যাওয়া এসব চিরকুট তারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। নিজ ভূখণ্ডে তল্লাশিচৌকি পেরিয়ে চলাচল, প্রায় প্রতিদিন ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানের মতো ঘটনা তাঁদের মধ্যে মানসিক এক বৈকল্য তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনি কিশোর-তরুণদের অনেকে মনে করছেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। এবার তাঁদেরই ইসরায়েলের সেনাদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।

পশ্চিম তীরের বাসিন্দা ও লেখক জালাল আবু খাতারের মতে, বিষয়টা এমন নয় যে তাঁরা মরে যেতে চান। বরং তাঁরা মনে করছেন, আত্মবিসর্জন ছাড়া তাঁদের কাছে মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে দেওয়ার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

মনোবিদ ও শিক্ষকেরা বলছেন, হতাশায় নিমজ্জিত এই ফিলিস্তিন শিশু-কিশোরদের এটা বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ যে বেঁচে থাকলে মানুষ হিসেবে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। এই আশাবাদই তাদের এ পথ থেকে ফেরাতে পারে।

পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে একদল মেয়ে একটি খালি টেবিলের চারপাশে জড়ো হয়ে বসে আছে। টেবিলের ওপর একটি গোলাপ। এর ঠিক পাশেই একটি ছবি। সেই ছবি তাদেরই সহপাঠী সাদিলের। ইসরায়েলের সেনারা সর্বশেষ জেনিনে যে সামরিক অভিযান চালায়, সে সময় ইসরায়েলের এক সেনার গুলিতে সাদিল নিহত হয়।

যেখানে গোলাপ ও সাদিলের ছবি রাখা, তার পাশেই বসেছে ১৫ বছর বয়সী সালমা ফিরাজ। সহপাঠীকে হারানোর শোক তার চোখেমুখে। জিজ্ঞাসু চোখে ফিরাজ প্রশ্ন করল, ‘আগামী ১০ বছর পর আমি কী হব, এটা আমি কীভাবে ভাবব। আমি তো এটাই জানি না, কাল আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব কি না।’

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল চলতি মাসেই একটি প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিবছর হাজারো ফিলিস্তিনি শিশুকে গ্রেপ্তার করেন ইসরায়েলি সেনারা। এই শিশুদের ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে ইসরায়েলে।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এসব ফিলিস্তিনি শিশুর প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করার কোনো কোনো পর্যায়ে মারধর করা হয়। এ ছাড়া তাদের ৬৯ শতাংশকে উলঙ্গ করে তল্লাশি চালান ইসরায়েলি সেনারা। প্রায় অর্ধেক গ্রেপ্তারের সময় আঘাত পায়। অনেকের গুলিবিদ্ধ হয়। কারও কারও হাড়ও ভেঙে যায়।

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ সম্প্রতি জানান, ১৯৬৭ সালের পর থেকে দখলকৃত ভূখণ্ডের আট লাখ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ শিশু। তিনি বলেন, কোনো প্রমাণ বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কোনো অভিযোগ ছাড়াই দণ্ড দেওয়া হয় এবং হেফাজতে রাখা অবস্থায় তাদের ওপরে পাশবিক নির্যাতনও চালান সেনারা।

দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক জেসন লি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তারা তো এ বিশ্বেরই শিশু অথচ সামরিক আদালতে পদ্ধতিগত নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। শিশুদের এভাবে মারধর ও উলঙ্গ করার ঘটনার বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পশুর মতো আচরণ করা হচ্ছে তাদের সঙ্গে। তাদের ভবিষ্যৎ এভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.