Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

এমন পুকুর চুরি কইরা ফালাইব, এটা তো হতে পারে না’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চালানো একটি উচ্ছেদ অভিযানে জব্দ করা মালামাল নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রে কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কারসাজিতে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের একটি চক্রের সঙ্গে ডিএনসিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এক নারী কাউন্সিলর জড়িত বলে অভিযোগ।

রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৮ জুলাই একটি অভিযান চালায় ডিএনসিসি। স্থানীয়ভাবে ‘টায়ার পট্টি’ নামে পরিচিত এলাকাটিতে চালানো এই অভিযানে একটি বড় ও একটি ছোট দোতলা স্থাপনা, ছয় শতাধিক অবৈধ ঘর (টিনের ছাউনির) ও অন্য মালামাল জব্দ করা হয়।

জব্দ করা মালামাল ওই দিনই (৮ জুলাই) ঘটনাস্থলে নিলামে বিক্রি করা হয়। নিলাম পরিচালনা করেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোতাকাব্বির আহমেদ। এখতিয়ারভুক্ত এলাকা না হলেও নিলামের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির সংরক্ষিত ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর শাহীন আক্তার। কারসাজিতে এই দুজন জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চালানো একটি উচ্ছেদ অভিযানে জব্দ করা মালামাল নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রে কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কারসাজিতে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের একটি চক্রের সঙ্গে ডিএনসিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এক নারী কাউন্সিলর জড়িত বলে অভিযোগ।

রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৮ জুলাই একটি অভিযান চালায় ডিএনসিসি। স্থানীয়ভাবে ‘টায়ার পট্টি’ নামে পরিচিত এলাকাটিতে চালানো এই অভিযানে একটি বড় ও একটি ছোট দোতলা স্থাপনা, ছয় শতাধিক অবৈধ ঘর (টিনের ছাউনির) ও অন্য মালামাল জব্দ করা হয়।

জব্দ করা মালামাল ওই দিনই (৮ জুলাই) ঘটনাস্থলে নিলামে বিক্রি করা হয়। নিলাম পরিচালনা করেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোতাকাব্বির আহমেদ। এখতিয়ারভুক্ত এলাকা না হলেও নিলামের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির সংরক্ষিত ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর শাহীন আক্তার। কারসাজিতে এই দুজন জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

সর্বোচ্চ দরদাতা, অন্য অংশগ্রহণকারী, সিটি করপোরেশনের কর্মী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে এই নিলামে কারসাজি হওয়ার বিষয়টি জানা যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১৫ থেকে ১৬ জন ব্যক্তি এই নিলামে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। তাঁরা ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাঁদের বলা হয়, নিলামে প্রতিযোগিতা হলে মালামালের দাম বেশি উঠবে। এতে লাভ কম হবে। এমন কথা বলে নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি চক্রান্ত করে জব্দ করা মালামাল বিক্রির জন্য ছয় লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। পরে লোক দেখানো নিলাম হয়। এতে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের ছয়জন নেতা অংশ নেন। জব্দ করা মালামাল বিক্রি হয় মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আয়করসহ (আইটি) সিটি করপোরেশনের কোষাগারে জমা দেওয়া হয় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।

গাবতলীর যে এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল, সেটি ডিএনসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার। উচ্ছেদ অভিযানকালে দেড় ঘণ্টার মতো ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে প্রথম আলোকে জানান তিনি। সারোয়ার বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে জব্দ করা মালামালের নিলামে কারসাজি হওয়ার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন।

সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযানকালে দেখেছি, সেখানে বড় দুটি দোতলা ভবন ছিল। অন্য সবকিছু মিলিয়ে জব্দ করা মালামালের আনুমানিক মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু নিলামের কাগজে দেখলাম, তা মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যিনি নিলামে মালামাল পেয়েছেন, তাঁর সঙ্গে পরবর্তী সময় যোগাযোগ করি। জানতে পারি, ছয় লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন তিনি।’

কাউন্সিলর সারোয়ারের ভাষ্য, ডিএনসিসির এক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক নারী কাউন্সিলর এই কারসাজিতে জড়িত বলে জানতে পেরেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন পুকুর চুরি কইরা ফালাইব, এটা তো হতে পারে না।’

নিলামের কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, মোট ছয়জন ব্যক্তি নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ দর হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট বাবদ যুক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৫ শতাংশ আইটি বাবদ ৬ হাজার ৬০০ টাকা। সব মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা সিটি করপোরেশনের কোষাগারে জমা হয়েছে।

নথি অনুযায়ী, নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা মোল্লা উদয়। তবে তাঁর পুরো নাম আহমেদুর রহমান মোল্লা। তিনি ঢাকা উত্তর সিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে জানা যায়।

নিলামে অংশ নেওয়া অপর পাঁচজন হলেন—রতন, শামীম, মিরাজ, ফারুখ শেখ ও জাকির খাঁ। সূত্র জানায়, তাঁরা যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। রতন ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। শামীম যুবলীগ নেতা। মিরাজ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য। ফারুখ ৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আর জাকির ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা।

সর্বোচ্চ দরদাতা মোল্লা উদয় প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিলামের সরকারি বিষয় তো সবই বুঝেনই। খরচা তো তাঁদের (কর্মকর্তা-কাউন্সিলর) একটা দিতে হয়েছে। কিন্তু নিলামের কাগজে তাঁরা কী উল্লেখ করেছেন, তা তো আমি জানি না।’

কত টাকা দিয়েছেন, জানতে চাইলে মোল্লা উদয় বলেন, ‘অ্যারাউন্ড সিক্সের (প্রায় ছয়) মতো আমাদের দিতে হয়েছে।’

ছয় লাখ টাকা কি না, তা জানতে চাইলে আহমেদুর রহমান ‘হুম’, ‘জ্বি-জ্বি’ বলে উত্তর দেন তিনি।

নিলামে মালগুলো কেনার পরপরই তা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আরও বেশি টাকায় বিক্রি করে দেন আহমেদুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে এই মালামাল ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনেন ঢাকা উত্তর সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ওরফে লিটন। এই টাকায় মালামাল কেনার কথা তিনি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের চক্রটি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা মুনাফা করেছে এখান থেকে।

কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর শাহিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, নিলাম জনসম্মুখেই হয়েছে। সেখানে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সাধারণ জনগণ ও নিলামের পার্টিগুলোও ছিল। এক্সেস (অতিরিক্ত) কথা বলার কোনো অপশন (সুযোগ) নেই। যে বা যাঁরা এসব বলেছেন, তাঁরা এই কার্যক্রমকে নষ্ট করার জন্য বলছেন।

সর্বোচ্চ দরদাতার (মোল্লা উদয়) কাছ থেকে কারসাজির বিষয়টি জানা গেছে, বলা হলে শাহিন আক্তার বলেন, ‘উনি ফালতু কথা বলেছেন। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

অভিযোগের বিষয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোতাকাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা তো ওপেন (উন্মুক্ত) নিলাম হয়েছে। যাঁরা নিলামে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের স্বাক্ষর আছে। নিলামে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট, কাউন্সিলর ও সাধারণ মানুষ ছিলেন। ছয় লাখ টাকার কোনো এমাউন্ট (টাকার পরিমাণ) আসেনি।

নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা এই টাকার কথা বলেছেন, জানানো হলে মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা বলার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। তবে নিলামে প্রথমে অনেকেই ডেকেছিল। ২৫ থেকে ৩০ জন মনে হয়। পরে আবার বলল, ডাকবে না। এ রকম একটা গ্যাঞ্জাম হয়েছিল।’

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.