চন্দ্র নাথ তখন কিশোর। সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। ১৯৯১ সালের কথা। সে বছর ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল চট্টগ্রামে, মারা গিয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। চোখের সামনে নিজের পরিবারকে সর্বস্বান্ত হতে দেখেছিলেন চন্দ্র নাথ।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন চন্দ্র নাথ। পরিবারের সচ্ছলতাও ছিল না। ঘাড়ে ঋণের বোঝা। এরই মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যায় অবস্থা খারাপ হয় তাঁদের। চন্দ্র নাথকে পাঠানো হয় জমিতে কাজ করতে। পড়াশোনায় ভালো হওয়ার পরও পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ও বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেননি। এর দুই বছর পর ঘূর্ণিঝড়ে আরও বেকায়দায় পড়তে হয় তাঁর পরিবারকে।
১৯৯১ সালের সেই কিশোর চন্দ্র নাথ এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। দেশটির মেকার করপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) তিনি। প্রতিষ্ঠানটি ম্যানুফ্যাকচারিং মনিটরিং সিস্টেম–বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পারডু ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং স্কলার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন চন্দ্র নাথ।
বাংলাদেশে মোখা আঘাত হানবে—আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন সতর্কবার্তা শুনে যুক্তরাষ্ট্রে বসেও শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন চন্দ্র নাথ। ফেসবুকে স্মৃতিচারণা করেছেন ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার দিন ও পরের সময়ের। সোমবার চন্দ্র নাথের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর। সেখানেও কৈশোরে দেখা সেই ঘূর্ণিঝড়কেই জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত বলেছেন তিনি।
ফেসবুকে চন্দ্র নাথ লিখেছেন, ‘১৯৯১-এর মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়কে সামনে থেকে দেখেছি, শিখেছি অনেক কিছুই। সেটা বর্ণনা করলে একটা বইয়ে কুলাবে না।’
রোববার ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। এ ঝড়ে বাংলাদেশে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা ও প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সাগর থেকে কূলে এসে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আশঙ্কা অনুযায়ী অতটাও ভয়াবহ হয়নি মোখা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মজা করছেন। অনেকে মোখাকে ডাকছেন ‘খামোখা’ বলে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে মানুষের এ উপহাসে দুঃখ প্রকাশ করলেন চন্দ্র নাথ। বললেন, যুক্তরাষ্ট্রেও আবহাওয়ার গতিবিধি শতভাগ নির্ভুল হয় না। অনেক ফারাক থাকে। তবে লোকজনকে সতর্ক করা আবহাওয়া অধিদপ্তর বা শহরের মেয়রের কর্তব্য। ঘূর্ণিঝড় যে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, তার প্রমাণ তো ইতিহাসে আছে। সেটা নিয়ে উপহাস করা বোকামি।







Add comment