বিপণিকেন্দ্রগুলোকে অগ্নিদুর্ঘটনা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সপ্তাহখানেক আগে ১১ দফা নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এসব নির্দেশনার কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি। বিপণিকেন্দ্রভিত্তিক সমিতিগুলো অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে শুধু মাইকিং করে দায়িত্ব শেষ করছে।
অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে জেলা প্রশাসন গত ১০ এপ্রিল নগরের বিপণিকেন্দ্রগুলোর মালিক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে জেলা প্রশাসন ১১টি নির্দেশনা দেয়।
জেলা প্রশাসন যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছে, তার মধ্যে অন্তত আটটি বিপণিকেন্দ্র মালিক, ব্যবসায়ী বা দোকানিদের নিজ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে হবে। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, নির্দেশনাগুলোর মধ্যে কয়েকটি খুব সহজে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যেমন—ফায়ার সেফটি লাইসেন্স সংগ্রহ, অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র সংরক্ষণ, বৈদ্যুতিক সংযোগ সময়োপযোগী করতে বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে চিঠি, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, ফুটপাত অবমুক্তকরণ, ডিশ-ইন্টারনেট সংযোগে শৃঙ্খলা আনা, বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, অগ্নিনির্বাপণসহ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন। সহজে বাস্তবায়নযোগ্য এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ এক সপ্তাহেও দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা এখন ঈদের বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত।
জেলা প্রশাসনের আগে বিভিন্ন সময় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও নগরীর বিপণিকেন্দ্রগুলোকে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সতর্ক চিঠিতে কোনো কাজ হয়নি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. আবদুল হালিম গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু তাদের (বিপণিকেন্দ্র মালিক, ব্যবসায়ী সমিতি, দোকানি) সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। যার কারণে তারা অগ্নিদুর্ঘটনা ঝুঁকিকে মাথায় নিচ্ছে না। যেসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে আছে, সেগুলো কেন করা হবে না? অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ও ফায়ার সেফটি লাইসেন্স সংগ্রহের কাজটি তো তারা নিজেরাই করতে পারে।’
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, নগরের সবচেয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে রিয়াজউদ্দিন বাজার। এখানে সব মিলিয়ে ২০ হাজার দোকান রয়েছে। এরপর ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে টেরিবাজার ও জহুর হকার মার্কেট।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে দুই শতাধিক ছোট-বড় বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। এখানে সব মিলিয়ে রয়েছে ২০ হাজার দোকান। টেরি বাজারে ছোট-বড় ৬৯টি মার্কেট আছে।
জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে বিদ্যুৎ-টেলিফোন-ইন্টারনেটের তার ছড়িয়ে আছে, দেখলেই ভয় লাগে। আমরা নির্দেশনা পেয়েছি। কিন্তু কতটা কী করতে পারি, তা দেখার বিষয়। এখন আমরা শুধু মাইকিং করে দোকানিদের সতর্ক করছি। আগুন থেকে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, সে বিষয়ে প্রচারপত্র বিলি করছি।’
জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ‘অদ্ভুত’ এক আবদার করেছে বলে সূত্র জানায়। নির্দেশনার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে তারা ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়ি সার্বক্ষণিকভাবে মার্কেটের কাছে রাখতে বলেছে।
সমিতির এমন চাওয়ার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজেরা কোনো উদ্যোগ না নিয়ে আগুন কখন লাগবে আর তা নেভানোর জন্য আমাদের গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলাটা দায়িত্বহীন কাজ।’
এ বিষয়ে জানতে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হককে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
তবে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখানকার দোকানগুলোতে নিজস্ব কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। প্রশাসন বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা মাইকের মাধ্যমে দোকানিদের সতর্ক করছি।’
জেলা প্রশাসনের ৯ নম্বর নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে শুধু জহুর হকার্স মার্কেটকে নিয়ে। এতে বলা হয়, জহুর হকার্স মার্কেট দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। অগ্নিঝুঁকি রোধে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বড় বড় পানির ট্যাংক বসাতে বলা হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, জহুর হকার্স মার্কেটটির দোকানিদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া পানির ট্যাংক বসানোর নির্দেশনা বাস্তবায়নের ব্যাপারেও মার্কেট কমিটি কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মুহাম্মদ ফখরুজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি। ধরে ধরে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। মঙ্গলবার (আজ) আমরা একটি কমিটি করে দেব, যাতে নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা ভূমিকা রাখতে পারে। কেউ নির্দেশনা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’







Add comment