Nazihar News Network
News frzom Nazihar It Solution

জান্তার রাজ্যে কেমন আছে মিয়ানমারের মানুষ

ইনলে হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে ঘোরাফেরা করছে নৌকাগুলো। এই স্বচ্ছ হ্রদ আর শান পাহাড়ের নীলাভ সৌন্দর্য একসময় পর্যটকদের তীব্রভাবে আকৃষ্ট করত।

মিয়ানমারের সেই ইনলে হ্রদের পানি এখনো স্বচ্ছ। শান পাহাড়ও হারায়নি সৌন্দর্য। তবে বদলে গেছে দেশের পরিস্থিতি। জান্তা সরকারের মিয়ানমারে এখন আর পর্যটক নেই বললেই চলে। করোনা মহামারি ও দুই বছর আগে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে সৃষ্ট সহিংসতার কারণে পর্যটকেরা আর মিয়ানমারে যান না।

বিবিসির সংবাদকর্মীরা হ্রদে যে নৌকায় ভেসে যাচ্ছিলেন, তার মাঝি ছিলেন স্থানীয় ইনথা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মাঝি বললেন, তিন বছরের বেশি সময় পর প্রথম বিদেশিদের নৌকায় তুলেছেন তিনি। পর্যটক কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে এই মাঝির। তিনি বলেন, এখন সংসার চালাতে তাঁর কষ্ট হয়। অন্য মাঝিদের বক্তব্যও অনেকটা একই রকম। পর্যটক কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ মাঝি এখন নৌকা নিয়ে হ্রদে মাছ ধরেন। তবে মাছ ধরতে পারেন কমই।

ইনলে হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে ঘোরাফেরা করছে নৌকাগুলো। এই স্বচ্ছ হ্রদ আর শান পাহাড়ের নীলাভ সৌন্দর্য একসময় পর্যটকদের তীব্রভাবে আকৃষ্ট করত।

মিয়ানমারের সেই ইনলে হ্রদের পানি এখনো স্বচ্ছ। শান পাহাড়ও হারায়নি সৌন্দর্য। তবে বদলে গেছে দেশের পরিস্থিতি। জান্তা সরকারের মিয়ানমারে এখন আর পর্যটক নেই বললেই চলে। করোনা মহামারি ও দুই বছর আগে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে সৃষ্ট সহিংসতার কারণে পর্যটকেরা আর মিয়ানমারে যান না।

বিবিসির সংবাদকর্মীরা হ্রদে যে নৌকায় ভেসে যাচ্ছিলেন, তার মাঝি ছিলেন স্থানীয় ইনথা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মাঝি বললেন, তিন বছরের বেশি সময় পর প্রথম বিদেশিদের নৌকায় তুলেছেন তিনি। পর্যটক কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে এই মাঝির। তিনি বলেন, এখন সংসার চালাতে তাঁর কষ্ট হয়। অন্য মাঝিদের বক্তব্যও অনেকটা একই রকম। পর্যটক কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ মাঝি এখন নৌকা নিয়ে হ্রদে মাছ ধরেন। তবে মাছ ধরতে পারেন কমই।

মিয়ানমারের বিভিন্ন রাস্তায় সেনা টহল দেখা যায়

মিয়ানমারের বিভিন্ন রাস্তায় সেনা টহল দেখা যায়রয়টার্স ফাইল ছবি

সামরিক অভ্যুত্থানের পর গণবিক্ষোভ রুখতে সামরিক বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্রের প্রয়োগ করেছে। এর পর থেকেই মিয়ানমারে একরকম গৃহযুদ্ধ চলছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বিদ্রোহীরা। এই বিদ্রোহীরা এখন শান রাজ্যে ঢুকেছেন। তাঁরা স্থানীয় জঙ্গি দল পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসে (পিডিএফএস) যোগ দিয়েছেন। এলাকার তরুণেরাই এই দলে বেশি যোগ দিয়েছেন।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ইনথা পিডিএফের সঙ্গে হ্রদের কাছে গত জানুয়ারিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন ওই মাঝি। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন ছিলাম। হঠাৎ সব শেষ হয়ে গেল। এখন তরুণেরা অভ্যুত্থান নিয়ে বেশি বিক্ষুব্ধ।’

মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন ও নেপিডোতে গৃহযুদ্ধের আঁচ লাগেনি। এই শহরগুলোর বাইরে মাত্র দুটি জায়গায় মাঝিদের কাজ করার অনুমতি দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। তার মধ্যে একটি হলো ইনলে হ্রদ।

অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো বিবিসিকে ইনলে হ্রদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর্মড ফোর্সেস ডেতে বড় সামরিক কুচকাওয়াজের সংবাদ সংগ্রহের কাজে বিবিসির ওই দল সেখানে পৌঁছেছে। তবে ভিসার শর্ত হলো, বিবিসি কোনো নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না।

বিদ্যুৎ নেই, দ্রব্যমূল্য চড়া

মিয়ানমারের যেসব জায়গা সেনাবাহিনী নিজেদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করে, সেসব জায়গায় গিয়ে দেশটির প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারা কঠিন। সড়কে ভারী অস্ত্র নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের টহল দিতে দেখা যায়। রাস্তায় রাস্তায় সেনাবাহিনীর তল্লাশিচৌকি মোতায়েন করা হয়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে অনেকটা দুর্গের মতো করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। আততায়ীর হামলা থেকে সুরক্ষাকবচ হিসেবে মিয়ানমারের সেনারা এগুলো ব্যবহার করে।

ইনলে হ্রদের কাছে বালুর বস্তা দিয়ে গড়ে তোলা একটি চৌকিতে বিদেশিদের আসার ব্যাপারে মাঝিকে সতর্ক করেন মিয়ানমারের সেনারা। জায়গাটি খুবই বিপজ্জনক বলে জানান তাঁরা।

ইনলে হ্রদে দুই দিন কাটান বিবিসির সাংবাদিকেরা। এ সময়ের মধ্যে এ জায়গায় কোনো বিদেশি পর্যটক দেখা যায়নি। পর্যটন খাতে এ মন্দার কারণে মিয়ানমারের স্থানীয় অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। মিয়ানমারের হোটেলগুলো প্রায় ফাঁকা। নোয়াউংসোয়ে শহরের অবস্থাও একই রকম। বিবিসির প্রতিনিধিদল যখন সেখানে ছিল, তখন ওই শহরে কোনো বিদ্যুৎ–সংযোগ ছিল না। অতিথিরা এলে কেবল রাতে জেনারেটরে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হতো।

থান তায়ুং শহরেও থামেন বিবিসির প্রতিনিধিরা। সেখানে গত জানুয়ারিতে সংঘর্ষ হয়েছে। বিবিসির প্রতিনিধিরা যেদিন ওই শহরে যান, সেদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটের দিন। কেউই বিবিসির সঙ্গে সংঘর্ষ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তবে বেশির ভাগই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অভাব নিয়ে অভিযোগ করেছেন। বৃদ্ধদের একটি দল আকাশের দিকে হাত তুলে বলেন, ‘এখানে খারাপ সময়। সবকিছুর জন্য তিনিই দায়ী।’ বিবিসি বুঝে নেয়, বৃদ্ধদের ওই দল সামরিক শাসক ও অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে ইঙ্গিত করছেন।

এখনো সু চির ছবি

হ্রদের ওপরে রৌপ্যসামগ্রীর একটি দোকানের কাচের তাকগুলো খালি। কাঠের দীর্ঘ দোকানটির মাত্র এক প্রান্তে কিছু পণ্য রাখা হয়েছে। হঠাৎ আসা পর্যটকদের কাছে কিছু বিক্রির জন্য সেগুলো রাখা হয়েছে।

তবে দোকানটির ঠিক মাঝখানে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচির ছবি রাখা। দোকানে ঢুকলে ওই ছবিতে চোখ পড়বেই। ইনলে হ্রদ এলাকায় সু চির অনেক সমর্থক রয়েছেন। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার দিনে হ্রদের ঠিক মাঝখানে নৌকা নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।

জান্তা সরকার কী ভাবছে

এসব অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্ষোভ নিয়ে সামরিক সরকার কী ভাবছে? রাজধানী নেপিডোতে থাকা সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

২০ বছরের কম সময় আগে গড়ে ওঠা এ শহরে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অবরুদ্ধ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। শহরটি নির্মাণে প্রচুর খরচ হয়েছে। বিদেশি হামলা থেকে বাঁচাতে এখানে দুর্ভেদ্য দুর্গ নির্মাণ করা হয়েছে।

আমর্ড ফোর্সেস ডের কুচকাওয়াজে মিন অং হ্লাইং যে বক্তব্য দেন, তাতে সেনা অভ্যুত্থান ও ক্ষমতা দখল নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি।

পূর্বসূরিদের মতোই মিন অং হ্লাইংয়ের ব্যয়বহুল প্রকল্পে আগ্রহ বেশি। তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও বৈদ্যুতিক যান তৈরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এগুলো দিয়ে ইয়াঙ্গুনের মতো বাণিজ্যিক এলাকায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং মিয়ানমারে বেশি দাম দিয়ে দূষণ সৃষ্টিকারী জেনারেটরগুলো হরহামেশাই চলতে দেখা যাচ্ছে।

অভ্যুত্থানের আগের তুলনায় ইয়াঙ্গুনের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন নাজুক। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ ও বার বন্ধ। ব্যাংকিং ব্যবস্থা অকার্যকর বললেই চলে। কালোবাজারে চড়া দামে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে বাণিজ্য চলছে। এখনো প্রায়ই হামলা হয় মিয়ানমারে। ইয়াঙ্গুনে যেদিন বিবিসির প্রতিনিধিদল পৌঁছেছে, সেদিনই সামরিক জান্তার একজন আইনজীবীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিজের অবস্থান পোক্ত করতে আর বেশি সময় নেই, মিন অং হ্লাইং এমনটা বুঝতে পারছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। বৈধতার জন্য মিন অং হ্লাইংকে নির্বাচন দিতে হবে। এতে এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও চীনের কাছ থেকে তিনি সমর্থন পেতে পারেন।

চলতি বছরের আগস্টে নির্বাচন হতে পারে বলে বছরের শুরুতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিন অং হ্লাইং। তবে মিয়ানমারে যা পরিস্থিতি, তাতে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে পা জি গি গ্রামে বিমান হামলায় ১৬৮ জন নিহত হন।

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীরা এখন শক্তিশালী ও সশস্ত্র হয়ে উঠেছেন। তাঁদের অনেকেই তরুণ। তবু সামরিক বাহিনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভও চলছে। মিয়ানমারের সব জায়গায় বড় বড় ব্যানারে ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় লেখা থাকে, ‘দ্বিধা করবেন না। রক্ত ও ঘাম দিতে প্রস্তুত।’

আমাকে দেখে কি সুখী মনে হয়

ইনলে হ্রদে ফুয়াং ডো ও প্যাগোডায় মিন অং হ্লাইংয়ের ছবির পাশে অং সান সুচির ছবিও ঝুলতে দেখা যায়। বিবিসির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন একজন ট্যুর গাইড। মিয়ানমারের পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক, মানুষ কতটা সুখী জানতে চাইলে তাঁর চোখ ভিজে ওঠে। বলে ওঠেন, ‘আমাকে কি দেখে সুখী মনে হয়? আমরা অভ্যুত্থানের আগের যুগে ফিরে যেতে চাই।’

সবাই এই ট্যুর গাইডের মতো ভাবেন কি না, তা জানাটা কঠিন। তবে ধারণা করা যায়, সংখ্যাটা একেবারে কম নয়।

মিয়ানমারে প্রচলিত কৌতুক হলো, বেশির ভাগ দেশের একটি সেনাবাহিনী রয়েছে। তবে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর একটি দেশ আছে।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.