কমিটি ভেঙে দেওয়ার সাত বছর পর বগুড়ার সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের ১৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠার পর ২০১৬ সালে আগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর ঘোষিত এই কমিটিতে ছাত্র নন এবং বিবাহিতরাও পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আস্থাভাজনদের নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ‘পকেট কমিটি’ তৈরি করেছেন। এতে বিতর্কিতরা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।
ভর্তি-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠার পর ২০১৬ সালে আগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
এ সময় অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা আছে, এমন নেতাদের নিয়েই ১৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে পদ পাওয়া কারও বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষ করে কমিটিতে বিবাহিত এবং অছাত্র কেউ থাকলে অবশ্যই কমিটি থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হবে।
সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতির পদ পেয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শামিমা আকতার ওরফে সুমি। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন রত্না খাতুন। এ ছাড়া নতুন কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন তৌহিদা খাতুন, নিশা আকতার, সেরিনা খাতুন ও ঝুমা পাল। ফাতেমাতুজ জিবান, নীলিমা সরকার ও সানজিদা খাতুন পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন মিষ্টি খাতুন, তাকিয়া খাতুন ও সিনথিয়া আকতার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের চারজন নেতা বলেন, সভাপতির পদ পাওয়া শামিম আকতার ২০১২-১৩ সেশনে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স করতে পাঁচ বছর সময় লাগে। সেই হিসেবে অনেক আগেই শামিমার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। কিন্তু তিনি সংগঠনের প্রভাব খাটিয়ে কলেজের ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষ দখল করে ১০ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। তিনি তখন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে কলেজ ছাত্রলীগের ৬১ সদস্যের কমিটি বিলুপ্ত করে সংগঠনের জেলা কমিটি। আগের কমিটির কেউ পদ পাননি। তবে শামিমা আকতার সভাপতি পদ পেয়েছেন।
এ বিষয়ে শামিমা আকতার মুঠোফোনে বলেন, ‘২০১২-১৩ সেশনে ভর্তি হয়েছেন, এটা সত্য। ফেল করার কারণে এবং ইয়ার লস হওয়ায় মাস্টার্স শেষ করতে দেরি হয়েছে। কিছুদিন আগে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত আমি এই কলেজের শিক্ষার্থী।’ ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে শামিমা আকতার বলেন, ২০১৬ সালে ভর্তি-বাণিজ্যের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। ওই সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন।
কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতার দাবি, নতুন কমিটিতে মিষ্টি খাতুনসহ অন্তত দুজন বিবাহিত। এ সম্পর্কে মিষ্টি খাতুন বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের চাপে তাঁর বাল্যবিবাহ হয়েছিল। পরে পারিবারিকভাবে ছাড়াছাড়ি হয়। মিষ্টি খাতুন আরও বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটি পুরোটাই ‘বিতর্কিত’। সভাপতির আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়ায় গোটা ছাত্রলীগ বিব্রত। আর সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কোনো দিনই দেখা যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষনেতার সুপারিশে তিনি ওই পদ পেয়েছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, নতুন কমিটির কেউ বিবাহিত, এমনটা জানা ছিল না। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাঁদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।







Add comment