ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দরপতন চলছেই। আন্তব্যাংক বাজারে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ২৮৭ দশমিক ২৯ রুপি। এতে রুপির দর ইতিহাসের সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। খবর দ্য ডনের।
সোমবার পাকিস্তানে ডলারের দর বেড়েছিল ১ দশমিক ২৫ রুপি। মঙ্গলবার তা আবার ২ দশমিক ২৫ রুপি বাড়ে। অর্থাৎ কয়েক মাস ধরেই ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার এই দরপতন চলছে। সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের অর্থনীতি বড় সংকটে পড়েছে।
রুপির এই সর্বশেষ দরপতনে পাকিস্তানের মুদ্রাবাজারও বিস্মিত। তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, কী কারণে এ দরপতন। তবে অভিযোগের আঙুল ক্রমহ্রাসমান বিদেশি মুদ্রার মজুতের দিকে; সেই সঙ্গে আইএমএফের সঙ্গে ঋণের আলোচনা স্থগিত হয়ে যাওয়াও বড় একটি কারণ বলে মনে করছে তারা।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের পর ডলারের দর ১০৪ রুপি বেড়েছে। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে ইসহাক দার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর ডলারের দর বেড়েছে ৫৭ রুপি।
মুদ্রার এ দরপতনের কারণে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির সূচক রীতিমতো আকাশ ছুঁয়েছে। মার্চে দেশটির সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সরকার মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ও বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার টিকিয়ে রাখতে আমদানি সীমিত করেছে। কিন্তু আমদানিকারকেরা দুবাই থেকে বা অনানুষ্ঠানিক বাজার থেকে ডলার কিনছেন।
দুবাই থেকে অবশ্য প্রতি ডলার কিনতে আমদানিকারকদের ৩২৫ রুপি ব্যয় করতে হচ্ছে। এ দামে ডলার কিনে আমদানি করা হলে মূল্যস্ফীতির দ্রুত বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
তবে পাকিস্তানের মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তাদের ঘোষিত দরে খোলাবাজারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে। আজ বুধবার সকালে এক্সচেঞ্জ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান ডলারের দর দিয়েছে ২৮৯ দশমিক ৩০ রুপি, আগের দিন যা ছিল ২৮৭ রুপি।
পাকিস্তানের বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাজনৈতিক সংকটের কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে কড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। মুদ্রা ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুরো এক বছর নিছক রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর করে চলে গেল। এতে অর্থনীতির ক্ষতিই হয়েছে, আর কিছু নয়।
পাকিস্তানের এই দুর্গতির পেছনে দেশটির সামরিক বাহিনীর দিকে বরাবরই আঙুল তোলেন বিশ্লেষকেরা। স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময় সামরিক শাসনের অধীন ছিল দেশটি। বিভিন্ন বড় শক্তির দাবার ঘুঁটি হিসেবে কাজ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
সামরিক ব্যয় বাড়াতে বাড়াতে আজ এ দুর্যোগের মুখে পড়েছে পাকিস্তান। মেক্সিকোকে খেয়েছে তাদের ড্রাগ কার্টেল, ইতালিকে মাফিয়া, আর পাকিস্তানকে মিলিটারি—এমন কথা বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার গড় রিজার্ভ ছিল ৩৭ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানে ছিল তার অর্ধেক, অর্থাৎ ১৮ বিলিয়ন ডলার। আর ভারতের ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সেই পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন তিন বিলিয়নে নেমে এসেছে।
এদিকে ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক দীনতা মোকাবিলায় পাকিস্তান গত ৭৫ বছরে ২৩ বার আইএমএফের বেইলআউল প্যাকেজ সহায়তা নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মুর্তজা সায়্যিদ জিও নিউজকে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো, আমরাই হলাম আইএমএফের সবচেয়ে নিয়মিত গ্রাহক।’ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একই সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করা ভারত মাত্র সাতবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংহের যুগান্তকারী সংস্কারের পর থেকে একবারও যায়নি।’
আইএমএফ ঋণের সুরাহা হয়নি
এখন আবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু ঋণের শর্ত নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় আইএমএফের ঋণের কিস্তি পাওয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ, আইএমএফ ধনীদের ওপর করারোপের কথা বললেও এখন বিক্রয় কর বৃদ্ধির জন্য চাপাচাপি করছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। কিন্তু ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে করারোপের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে তারা। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে উচ্চ আয়ের মানুষের ওপর লেভি আরোপেরও বিরোধিতা করছে আইএমএফ।
পাকিস্তান বলছে, আইএমএফ মুখে গরিববান্ধব নীতির কথা বললেও তাদের শর্তের কারণে কার্যত গরিব মানুষের জীবন আরও কষ্টকর হবে।







Add comment