Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution Limited

ফোড়া কাদের বেশি হয় জানেন? প্রতিরোধে আছে ৫ উপায়

শরীরে, বিশেষ করে গোপন অঙ্গে ফোড়া হলে লজ্জার কারণে বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা নিতে দেরি করে ফেলেন। ফলে একটি সাধারণ সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করে।

শরীরের যেসব স্থানে ঘাম বেশি হয় (যেমন বগল, কুঁচকি, বেল্ট লাইন) সেখানে ফোড়া বেশি হয়। কিন্তু সংকোচের কারণে তা প্রকাশ করতে অনেকেরই অনীহা থাকে। ফলে কিছু ক্ষেত্রে রোগ অনেক বিস্তার লাভ করে।

শরীরে, বিশেষ করে গোপন অঙ্গে ফোড়া হলে লজ্জার কারণে বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা নিতে দেরি করে ফেলেন। ফলে একটি সাধারণ সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করে।

শরীরের যেসব স্থানে ঘাম বেশি হয় (যেমন বগল, কুঁচকি, বেল্ট লাইন) সেখানে ফোড়া বেশি হয়। কিন্তু সংকোচের কারণে তা প্রকাশ করতে অনেকেরই অনীহা থাকে। ফলে কিছু ক্ষেত্রে রোগ অনেক বিস্তার লাভ করে।

শরীরের কোনো স্থান হঠাৎ ফুলে বা লাল হয়ে ব্যথা শুরু হলে তাকে আমরা ফোড়া বা অ্যাবসেস বলে থাকি। সঙ্গে জ্বরও থাকতে পারে। এটি সবচেয়ে বেশি হয় আমাদের ত্বকে, যার বেশির ভাগ নিজে নিজেই সেরে যায়। কিন্তু কিছু স্থানে ফোড়া হলে খুব যন্ত্রণাদায়ক হয় (যেমন দাঁতের গোড়া, টনসিল, মলদ্বারের আশপাশে)। আবার কিছু ফোড়া প্রাণঘাতীও হতে পারে, যেমন লিভার অ্যাবসেস, ফুসফুসের অ্যাবসেস, কিডনি কিংবা ব্রেন অ্যাবসেস ইত্যাদি।

ফোড়া কীভাবে হয়?

ফোড়া তৈরি হওয়ার মূলে আছে জীবাণুর সংক্রমণ। শরীরের কোনো স্থানে জীবাণু সংক্রমণ হলে তাদের ধ্বংস করার জন্য রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কাজ শুরু করে। তারা জীবাণু সংক্রমণের স্থানকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। সেই সঙ্গে এর ভেতরে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে। এর ফলে জীবাণুর ক্ষতিকর প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ক্ষতিকর কেমিকেল যোগ হয়ে তৈরি হয় ফোড়া। তাই ফোড়া শরীরের অভ্যন্তরে ফেটে গিয়ে তার ভেতরে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ রক্তে ছড়িয়ে গেলে প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে। এ জন্য ফোড়ার তরলকে দ্রুত শরীর থেকে বের করে দিতে হয়।

ফোড়া কত ধরনের হতে পারে?

জীবাণুর সংক্রমণের ধরন ও রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ফোড়ার প্রকৃতি। অনেক ক্ষেত্রে জীবাণুর সংক্রমণ খুব ধীর গতিতে হয়। তখন রোগীর সে রকম ব্যথা, বেদনা অনুভূত হয় না। সাধারণত টিবি, সিফিলিস, এইডস—এসব রোগে এ রকম ফোড়া বা অ্যাবসেস হয়। এদের বলা হয় কোল্ড অ্যাবসেস। তবে বেশির ভাগ ফোড়াতেই সাধারণ উপসর্গ হলো দ্রুত ফুলে ওঠে ব্যথা করা ও লাল হয়ে যাওয়া। অনেকের একই সঙ্গে জ্বরও অনুভূত হয়।

যাদের বেশি হয়

সব ধরনের মানুষেরই ফোড়া হতে পারে। যেসব দেশে আর্দ্রতা বেশি সেখানে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরের লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে ফোড়া তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে ফোড়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, ক্রনিক কিডনি ও এইডসের রোগী ইত্যাদি।

চিকিৎসা

ত্বকের ফোড়াগুলোর বেশির ভাগই এমনিতেই সেরে যায়। তবে ফোড়ার স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে ও অ্যান্টিসেপটিক মলম ব্যবহার করলে দ্রুত সেরে ওঠে। কিন্তু যেসব ফোড়া দ্রুত বড় হয় ও অনেক ব্যথা করে, সেগুলোর জন্য চিকিৎসককে দেখানো জরুরি।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীরা খেজুরের কাঁটা বা লেবুর কাঁটা বা পিন দিয়ে ফোড়া গেলে আরও ইনফেকশন বাঁধিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। এগুলো যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত থাকে না, যার কারণে আরও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো চিকিৎসক না থাকলে দোকান থেকে জীবাণুমুক্ত (স্টেরাইল) সিরিঞ্জ কিনে তা দিয়ে ফোড়া গেলে দেওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসক ফোড়ার অবস্থা দেখে তিন ধরনের চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন কিছু ফোড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে ও মলম ব্যবহারে সেরে যেতে পারে। আবার কিছু ফোড়ার মুখ ছিদ্র করে দিলে ভেতরের দূষিত পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে। এরপর ওষুধ খেলে বা মলম লাগালে সেরে উঠতে পারে। আর কিছু ফোড়ার জন্য সার্জারির প্রয়োজন হয়। সার্জারির পর নিয়মিত ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে ফোড়া সেরে ওঠে।

চিকিৎসক ফোড়া থেকে দূষিত তরল নিয়ে তার কালচার পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে দিতে পারেন।

প্রতিরোধ

১. পরিষ্কার সুতি পোশাক পরা, নিয়মিত গোসল, দাঁত পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। অনেকে একই অন্তর্বাস না ধুয়ে নিয়মিত পরে থাকেন। প্রতিদিনের অন্তর্বাস ধুয়ে পরতে হবে অথবা আলাদা অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে।

২. যাঁরা বেশি ঘামেন, তাঁরা ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনি, সেগুলা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। তাঁদের ছোটখাটো ফোড়ার চিকিৎসাও চিকিৎসককে দিয়ে করানো জরুরি।

৪. কখনো আঘাত পেলে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। অনেক সময় কোনো কিছু ভেতরে রয়ে গিয়ে ফোড়া তৈরি করতে পারে।

৫. ব্যথাহীন ফোড়া থাকলে কোল্ড অ্যাবসেস হতে পারে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

*ডা. রেজা আহমদ: কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সিলেট

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.