কাচ তৈরির মৌলিক প্রক্রিয়া হাজারো বছর ধরে মূলত একই রকম রয়ে গেছে। শুরুর দিকে প্রাকৃতিকভাবে চূর্ণ কোয়ার্টজ ব্যবহার করে কাচ উৎপাদন করলেও এখন কাচ উৎপাদনে বালি, সোডা অ্যাশ ও চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়। এ প্রক্রিয়া আমাদের চিরচেনা জানালার কাচ বা স্মার্টফোনের পর্দা, এমনকি পানীয়ের পাত্রে তৈরি হয়। তবে বিপুলভাবে উৎপাদিত কাচের তৈরি এ পণ্যগুলো পচনশীল বা বায়োডিগ্রেডেবল নয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কাচের বোতলগুলো একই রকম প্লাস্টিকের বোতলের চেয়েও ক্ষতিকর, এমনকি এগুলোর পুনর্ব্যবহারও বেশ জটিল।
আমাদের চারপাশে যে পরিমাণ কাচের পণ্য ব্যবহৃত হয় এবং প্রতিবছর বিপুলভাবে যে পরিমাণ কাচ পণ্য উৎপাদিত হয়, তাতে পরিবেশের জন্য ভয়ানক ঝুঁকি তৈরির শঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কাচ উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। আশাব্যঞ্জক ফলাফলও মিলেছে।
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস নামে বিজ্ঞান গবেষণার একটি জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে গবেষকেরা নতুন ধরনের পচনশীল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য (বায়োডিগ্রেডেবল ও বায়োরিসাইকেবল) কাচ উৎপাদনের কথা বলছেন। গবেষকদের ভাষ্য, জৈবিকভাবে উদ্ভূত অ্যামিনো অ্যাসিড বা পেপটাইড থেকে এ ধরনের নতুন রূপের কাচ তৈরি হবে। তাঁরা বলছেন, এ কাচ ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ওপর তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। চায়নিজ একাডেমী অব সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অব প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই)–এর ইয়ান জুয়েহাইয়ের নেতৃত্বে একটি দল এ গবেষণাটি করছে।
পরিবেশবান্ধব জৈব কাচ এখন পর্যন্ত অনেকাংশে টেকসই নয়। কারণ, উৎপাদিত উপকরণের তাপীয় স্থিতিশীলতা কম থাকায় সাধারণত কাচ উৎপাদনের সময় প্রয়োজনীয় উচ্চ তাপমাত্রায় এটি ভেঙে যায়। রাসায়নিকভাবে অ্যামিনো অ্যাসিড ও পেপটাইড পরিবর্তন করে গবেষক দলটি প্রাকৃতিক কাচের একটি অভিনব সংস্করণ তৈরি করেছে, যা অনেক বেশি টেকসই। তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নতুন বায়োমলিকিউলার কাচ একই সঙ্গে টেকসই ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এভাবে উৎপাদিত কাচ পণ্যের নমনীয়তার পাশাপাশি স্থায়িত্বও থাকবে।
এক বিবৃতিতে প্রধান গবেষক জুয়েহাই বলেছেন, টেকসই ভবিষ্যতের সঙ্গে বায়োমলিকিউলার কাচের ধারণা সম্পৃক্ত। তবে বায়োমলিকিউলার কাচ এখন পরীক্ষাগারে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বড় আকারে এ ধরনের কাচের বাণিজ্যিকীকরণ এখনও সময়সাপেক্ষ।







Add comment