Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution Limited

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ থেমেছে, বিজিবি মোতায়েন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষ থেমেছে। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকে বিক্ষিপ্তভাবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। দিবাগত রাত দেড়টার দিকেও কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনের রেলক্রসিংয়ে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা বলছেন, পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান থেকে সরতে রাজি নন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষ থেমেছে। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকে বিক্ষিপ্তভাবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। দিবাগত রাত দেড়টার দিকেও কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনের রেলক্রসিংয়ে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা বলছেন, পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান থেকে সরতে রাজি নন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটক এলাকায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

আহত হন স্থানীয় অনেকে। বিনোদপুর বাজারের বেশ কিছু দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের পুলিশ বক্সে।

রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পূরণজিত মহলদার প্রথম আলোকে বলেন, সব

চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা বলছেন, পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান থেকে সরতে রাজি নন
চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা বলছেন, পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান থেকে সরতে রাজি নন

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পাশের রেললাইনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহী স্টেশন ছাড়তে পারেনি। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি মেইল ট্রেন আবদুলপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষায় আছে। রাজশাহী রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম রাত একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, রেললাইনের ওপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন বলে খবর পেয়ে রাতে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন পথে অপেক্ষা করছে।

ঘটনার শুরু

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার বগুড়া থেকে বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বাসচালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথা–কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে

সংঘর্ষ–আগুন

বিনোদপুর বাজারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিনোদপুর বাজারে যান।

তখন গোলাম কিবরিয়ার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করা হয়। পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন বিনোদপুর এলাকায় ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টার দিকে পুলিশ বিনোদপুর এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজনকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের একটি শেল ছোড়ে। এতে  শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় পুলিশ পিছু হটে যায়। এর একপর্যায়ে বিনোদপুর বাজারে ঢুকে দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। সংঘর্ষে অনেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন আহত হন। আগুন দেওয়া হয় পুলিশ বক্সেও। এতে পুলিশ বক্সের পাশের ৮ থেকে ১০টি দোকানঘরও আগুনে পুড়ে গেছে।

পরিস্থিতি সম্পর্কে রাত ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। সবাইকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

আহত শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে নেওয়া হয় বাসে

সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের বাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির মেডিকেল সেন্টারে যান। সুলতান উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে কাভার করা যাচ্ছে না। আমরা তাঁদের বাস দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পাঠাচ্ছি।’

রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৮৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম উল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর কাদির, অপি করিম এবং দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ।

ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা

সংঘর্ষ শুরুর প্রায় চার ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ সময় মাইকে তিনি আজ রোববার ও কাল সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে ফেরত পাঠান। এরপর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে।

বিজিবি মোতায়েন

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে বিনোদপুর বাজার এলাকায় সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী বিজিবি ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটক ও বিনোদপুর বাজার এলাকায় তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন। পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.