Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution Limited

ঘাড়ে ব্যথা? নিজেই করুন প্রতিকার

ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই ডিজিটাল যুগে ঘাড়ব্যথার রোগী অনেক বেড়েছে। এক সপ্তাহের বেশি ঘাড়ে ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই ডিজিটাল যুগে ঘাড়ব্যথার রোগী অনেক বেড়েছে। এক সপ্তাহের বেশি ঘাড়ে ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কেন হয় ঘাড়ব্যথা

  • বয়স হলে ঘাড়ের টিস্যু ক্ষয় হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ল্যাপটপের সামনে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের এ সমস্যা বেশি হয়। এর কারণে ঘাড়ের মধ্যকার হাড়ে ফাঁক থেকে যায়। যাঁদের সারভাইকাল স্পন্ডেলাইটিস (ঘাড়ে মেরুদণ্ডের অংশে হাড়ক্ষয়) রয়েছে, তাঁদেরও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
  • কোনো কারণে স্পাইনাল কর্ডের কোনো টিস্যু ফুলে গেলে স্লিপ ডিস্ক হতে পারে। সেখান থেকেও ঘাড়ে ব্যথা হয়।
  • কোনো দুর্ঘটনায় ঘাড়ে আঘাত পেলে সেই ব্যথা বহুদিন স্থায়ী হয়। পেশিতে টান লাগলে মাঝেমধ্যেই তখন ব্যথা বাড়ে।
  • বসার ভঙ্গিতে ত্রুটি থাকলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। বাঁকাভাবে শুয়ে থাকলে ঘাড়ে চাপ পড়ে, সেখান থেকেও ঘাড়ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে অন্যদিকে ঘাড় ঘোরানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
  • মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকেও ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে।
  • অনেক সময় বিছানায় শুয়ে বই পড়া, টিভি দেখা বা উপুড় হয়ে ল্যাপটপে কাজ করা থেকেও ঘাড়ের পেশিতে টান লেগে ব্যথা হয়।

আরও পড়ুনঘাড়ে ব্যথার চিকিৎসা

সামনে ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করতে হয়, এমন সব পেশার মানুষদের এ রোগ বেশি দেখা যায়
সামনে ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করতে হয়, এমন সব পেশার মানুষদের এ রোগ বেশি দেখা যায়

কারা ঝুঁকিতে

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর আগেও হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। সামনে ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করতে হয়, এমন সব পেশার মানুষদের এ রোগ বেশি দেখা যায়। শুধু চেয়ার–টেবিলে বসে কাজ করেন, যেমন ব্যাংকার, নির্বাহী; কম্পিউটারে একনাগাড়ে কাজ, ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগে, এমন পেশা, যেমন মোটরসাইকেল বা সাইকেলচালকদেরও এ রোগ হতে পারে।

লক্ষণ

ঘাড়ের ব্যথা অনেক সময় কাঁধ থেকে ওপরের পিঠ, বুক, মাথার পেছনে বা বাহু হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘাড় থেকে হাতে নেমে আসা স্নায়ু বা নার্ভের ওপর চাপ পড়লে পুরো হাতেই ব্যথা হতে পারে। সার্ভিক্যাল স্পন্ডোলাইসিসের সমস্যা সবচেয়ে গুরুতর হয়ে দেখা দেয় যখন স্পাইনাল কর্ডের ওপর চাপ পড়ে। হাত–পায়ে দুর্বলতা, হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে। পায়খানা-প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থাও হতে পারে। ঘাড় নাড়াতে গেলে ব্যথা লাগে। ডানে–বাঁয়ে ঘাড় ঘোরাতে সমস্যা হয়। ঘাড়ে জ্যাম ধরে থাকে।

ব্যথার সঙ্গে হাতে, বাহুতে হতে পারে ঝিনঝিন, শিরশির, অবশ ভাব, সুচ ফোটানোর অনুভূতি। সেই সঙ্গে হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে অসুবিধা হয়।

পেশিতে টান পড়ার কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হয়। স্নায়ু সংকোচন, অর্থাৎ ঘাড়ের ভার্টিব্রায় হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা হাড়ের উৎস মেরুদণ্ডের কর্ড থেকে বেরিয়ে আসা স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ার কারণেও ব্যথা হয়। বিভিন্ন সময় আঘাতের কারণে এমনটা হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মেনিনজাইটিস বা ক্যানসারের মতো কয়েকটি রোগেও হতে পারে ঘাড়ব্যথা।

সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মতো পরিশ্রমের কাজ অনেক বেশি সময় ধরে করলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়
সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মতো পরিশ্রমের কাজ অনেক বেশি সময় ধরে করলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়

নিজেই করুন প্রতিকার

প্রতিদিনকার রুটিনে কিছু পরিবর্তন এনে সাধারণ ঘাড়ব্যথার প্রতিকার করা যায়।

  • শারীরিক ভঙ্গি স্বাস্থ্যকর করুন। বসে থাকার সময় আপনার মেরুদণ্ড যেন সরলরেখায় থাকে এবং কান সরাসরি আপনার কাঁধের ওপরে থাকে।
  • দীর্ঘ সময় একটানা বসে কাজ না করে এক ঘণ্টা পরপর ১০ মিনিট বিরতি নিন। যদি দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণ করেন বা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করেন, তবে উঠে পড়ুন, ঘুরে দেখুন এবং ঘাড় ও কাঁধ সামনে–পেছনে প্রসারিত করুন।
  • কাজের টেবিল–চেয়ার ও কম্পিউটার এমনভাবে সামঞ্জস্য করুন, যাতে মনিটর চোখের স্তরের সমান থাকে। দুই হাঁটু হিপের কিছুটা নিচে থাকবে। চেয়ারে আর্মরেস্ট বা হাতল ব্যবহার করা যেতে পারে। টেবিলে কুঁজো হয়ে বসবেন না।
  • মুঠোফোনে কথা বলার সময় কান ও কাঁধের মধ্যে ফোনটি ঠেকিয়ে রাখবেন না। প্রয়োজনে হেডফোন বা ফোনের স্পিকার অন করে নিন।
  • ধূমপায়ীরা ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। তাই ঘাড়ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে ধূমপান ছেড়ে দিন।
  • কাঁধের ওপর স্ট্র্যাপসহ ভারী ব্যাগ বহন এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত ওজন ঘাড়ে চাপ তৈরি করে ব্যথার সৃষ্টি করে।
  • মাঝারি-শক্ত সমান বিছানায় এক বালিশে চিত হয়ে ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর সময় ঘাড়ের নিচে বালিশ দিতে হবে। দরকার হলে বালিশ টেনে নামিয়ে ঘাড়ের নিচে নিন বা কম উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করুন, যাতে আপনার মেরুদণ্ডের পেশি সমতল থাকে।
  • সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মতো পরিশ্রমের কাজ অনেক বেশি সময় ধরে করলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। তাই একটানা না করে মাঝেমধ্যে বিরতি নিতে হবে।

কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে

ঘাড়ব্যথা বোঝার জন্য একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসক শুরুতেই রোগীর ঘাড়ের সচলতা, অসাড়তা ও পেশির দুর্বলতা যাচাই করবেন। আক্রান্ত রোগীর মাথা এগিয়ে, পিছিয়ে, পাশের দিকে কাত করে পরীক্ষা করে দেখেন। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। যেমন—

এক্স-রে: এক্স-রের মাধ্যমে স্নায়ু বা মেরুদণ্ডের কর্ড হাড়ের উৎস থেকে বা অন্যান্য ক্ষয়জনিত পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে, তা নির্ণয় করা যায়।

সিটি স্ক্যান: আক্রান্ত রোগীর ঘাড়ের অভ্যন্তরীণ কাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে নির্ণয় করারও প্রয়োজন হতে পারে।

এমআরআই: মেরুদণ্ডের কর্ড, মেরুদণ্ডের কর্ড থেকে আসা নার্ভগুলোসহ হাড় ও নরম টিস্যুর প্রকৃত অবস্থা জানতে কোনো কোনো রোগীর, বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁদের এমআরআইয়েরও প্রয়োজন হতে পারে।

রক্ত পরীক্ষা: কখনো কখনো সংক্রামক রোগ, হাড় বা সন্ধির টিবি, ক্যানসার ইত্যাদি নির্ণয়ের জন্য দরকার হয়।

চিকিৎসা

ঘাড়ব্যথার জন্য সাময়িক ব্যথার ওষুধ সেবন করতে পারেন। এ ছাড়া প্রিগাবালিন বা ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ঘাড় ও নার্ভের ব্যথা দূর করতে, দুশ্চিন্তা কমাতে এবং মাংসপেশি শিথিল করার জন্য দেওয়া হয়। মেরুদণ্ডের হাড়ের নিচের দিকের জয়েন্ট বা ঘাড়ের পেশিতে স্টেরয়েড ইনজেকশনও নেওয়া যায়।

অস্ত্রোপচার: যদি কোনোভাবেই ব্যথা না কমে, তবে ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত দেন।

ফিজিওথেরাপি: ব্যথা উপশমের জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে থেরাপিও নিতে পারেন। তবে অবশ্যই একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থেরাপিস্ট ব্যায়াম ও ম্যাসাজ দেবেন। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট মূলত ঘাড়ের টানা বা সার্ভিক্যাল ট্র্যাকশন, শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি, ম্যাসাজ, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশন দিয়ে থাকেন।

নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করুন। ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘাড় ঘোরানোর চেষ্টা করুন। দরকার হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তবে খুব বেশি ব্যথা থাকা অবস্থায় ব্যায়াম নয়। মনে রাখবেন, নিয়মিত ব্যায়ামে উপকার পাওয়া যায়।

ট্র্যাকশন: দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ব্যথা দূর করতে ওজন, পালি বা একটি বায়ু ব্লাডার ব্যবহার করে ট্র্যাকশন দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। ঘাড়ে ব্যথা, বিশেষত নার্ভ রুট জ্বালা–সম্পর্কিত ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে এই চিকিৎসা। মূলত অর্থোপেডিকস চিকিৎসকের পরামর্শে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এটা দিয়ে থাকেন।

সার্ভিক্যাল কলার: ঘাড়কে সাপোর্ট দিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এমন একটি নরম কলার পরে থাকতে পারেন। এটা ঘাড়ের কাঠামোগত চাপ বন্ধ করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। তবে জেনে রাখা ভালো, একবারে তিন ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় কলার ব্যবহার করা উচিত হবে না। অতিরিক্ত ব্যবহারে ব্যথা ভালো হওয়ার চেয়ে ক্ষতি হতে পারে।

ঘরোয়া প্রতিকার

  • ব্যথার স্থানে আইসব্যাগ ব্যবহার করা যায়। একটি আইস প্যাক বা বরফে তোয়ালে জড়িয়ে দিনে কয়েকবার দিতে হবে। হালকা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। লো সেটিংয়ে কোনো হিটিং প্যাড ব্যবহার করা যায়। তারপর ঘাড় আলতো করে কাত করুন, বাঁকান এবং ঘোরান।
  • সাধারণ ঘাড়ব্যথা ম্যাসাজেও নিরাময় হয়। তবে প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে দিয়ে করাতে হবে।
  • আপেল ভিনেগারের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ঘাড়ের পেশির স্ট্রেস হ্রাস করে এবং ব্যথা উপশম করে। একটি টিস্যু পেপার আপেল সিডার ভিনেগারে ভিজিয়ে নিন। টিস্যুটিকে আধা ঘণ্টা ঘাড়ের ওপর রেখে দিন। যত দিন না ব্যথা কমছে, দিনে দুবার করে করতে থাকুন।
  • ঘাড়ব্যথা কমাতে এই আসনগুলো অভ্যাস করতে পারেন—

      ভরদ্বাজাসন: ঘাড় ও কাঁধব্যথা উপশমে খুব কার্যকর যোগাসন।

      বালাসন: আসনটি আপনার ঘাড় এবং পেছন প্রসারিত করবে।

      শবাসন: নিয়মিত এ আসন করলে ঘাড়ব্যথা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

  • ব্যথানাশক লোকাল স্প্রে, জেল দিয়ে ভালোভাবে মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়। আবার হালকা গরম পানিতে গোসল করে তারপর জলপাই বা নারকেল তেল হালকা গরম করে কিছুক্ষণ মালিশ করতে পারেন। সকাল ও বিকেল—দুই বেলা মালিশ করলে আরাম পাবেন। মালিশের মাধ্যমেও ঘাড়ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সঠিক ও অভিজ্ঞ হাতে মালিশ করাতে হবে। তবে এটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.