ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ দিন ধরে শিশুদের টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন শিশুদের মা ও স্বজনেরা। কয়েকজন অভিভাবক বললেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিশুদের এসব টিকা দিতে হয়। সময়মতো টিকা দিতে না পারায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া, কিশোরী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিটি টিকার সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে চিকিৎসকেরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে শিশুদের তিনটি করে টিকা দিতে হয়। তাই এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সের মধ্যে ১০টি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে শিশুদের ৭ ধরনের টিকা দেওয়া হয়। টিকাগুলো হলো বিসিজি, ওপিডি বা পোলিও, আইপিভি, পিসিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআর-১ ও এমআর-২। কিন্তু গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পিসিভি, আইপিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআর-১ ও ২ টিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ইপিআই কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন হাসপাতাল ৯০ থেকে ১০০ শিশুকে নিয়ে অভিভাবকেরা টিকা দিতে আসছেন। অনেকে আছেন যাঁরা চার-পাঁচবার এসে ফিরে গেছেন। সাধারণত জন্মের পর শিশুর বয়স ৪৩ দিন পূর্ণ হলে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে ২৩ মাসের মধ্যে শিশুদের এসব টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া টিটি টিকারও সংকট রয়েছে। গর্ভবতী হওয়ার চার মাস পার টিটি টিকা নিতে হয়। এ ছাড়া কিশোরী থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীরাও এ টিকা নেন।
হাসপাতালের ইপিআই কেন্দ্রের টিকা প্রদানকারী সিনিয়র স্টাফ নার্স মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন করে টিকা নিতে আসেন। টিকা নেই বললে অভিভাবকেরা খেপে যান। সব ক্ষোভ আমাদের ওপর ঝাড়েন। কারণ, অনেক দূরদূরন্ত থেকে রিকশা ভাড়া খরচ করে তাঁরা আসেন। অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নয়। কারণ, ২৩ মাসের ভেতর টিকা দিতে পারলেই হয়।’
ইপিআই কেন্দ্রে টিকার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, প্রতিদিন টিকার জন্য সিভিল সার্জনকে বলা হচ্ছে।
পুনিয়াউট এলাকার এলিজা চৌধুরী বলেন, তাঁর সন্তানের বয়স দেড় মাসের বেশি। এ পর্যন্ত হাসপাতালে পাঁচ দিন এসেও কোনো টিকা পাননি।
পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের তাসলিমা বেগম টিটি টিকা নিতে গত সোমবার হাসপাতালে যান। কিন্তু টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ধুলা ওড়ে। আর এই শরীরে কষ্ট করে হাসপাতালে এসেও কোনো টিকা পেলাম না।’
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬ লাখ ১১ হাজার ৮৬২ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ৫৪ হাজার ১৭০ ও ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুর সংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯২।
জেলার ইপিআই তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় ১ বছরে গড়ে ৯১ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হয়। জেলার নয় উপজেলায় ২৯৪টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ৭২টি ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে টিকাকেন্দ্র রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে তিনটি করে টিকা দিতে হয়। তাই এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, শেষ হওয়ার আগেই ইপিআই কার্যক্রমের টিকার চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এবার সরবরাহ পেতে দেরি হয়েছে। কেন দেরি হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। তবে টিকার ঘাটতির জন্য শিশুদের কোনো সমস্যা হবে না। তবে অনেক টিকা চলে এসেছে বলে তিনি দাবি করেন।
মঙ্গলবার দিনভর হাসপাতালসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে কেউই ইপিআই কার্যক্রমের টিকা পায়নি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। দু-এক দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে কেন্দ্রগুলোতে এবং পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ডগুলোতে টিকা পৌঁছে যাবে।
Add comment