Nazihar News Network

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ

বিস্ফোরণের পর চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিন ও লোহার টুকরা। আশপাশের অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। উড়ে গেছে টিনের চালা। ভেঙে গেছে অনেক ঘরের কাচ। এলাকাবাসী বলছেন, বিস্ফোরণের পরের অবস্থা দেখে তাঁদের মনে হয়, এ যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ।

গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের এ কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২৫ জন।

বিস্ফোরণের পর চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিন ও লোহার টুকরা। আশপাশের অনেক ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে। উড়ে গেছে টিনের চালা। ভেঙে গেছে অনেক ঘরের কাচ। এলাকাবাসী বলছেন, বিস্ফোরণের পরের অবস্থা দেখে তাঁদের মনে হয়, এ যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ।

গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের এ কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২৫ জন।

কারখানাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বিস্ফোরণে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। এমনকি বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত।

এলাকাবাসী বলছেন, বিকট শব্দ ও কম্পনে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। কারও মনে হয়েছে, হয় তো বড় ভূমিকম্পন হয়েছে। কেউ ভেবেছেন, বোমা বিস্ফোরণ হলো নাকি!

কদমরসুলের সীমা অক্সিজেন কারখানা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে জাহানপুর এলাকা। এলাকাটির বাসিন্দারা গতকাল বিকেলে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান।

জাহানপুরের সাকি আকতার নামের এক গৃহবধূ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে বড় একটি শব্দ শুনি। শব্দে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এখানকার অনেকের ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে বলে জানতে পারি।’

বিস্ফোরণে লোহার পাত আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায়। এই লোহার পাতের আঘাতে দুজন মারা যান। তাঁদের একজন সালাহউদ্দিন, অপরজন সামশুল আলম।

সামশুলের বাড়ি জাহানপুরে। ঘটনার সময় তিনি কদমরসুলের একটি দোকানের ভেতরে ছিলেন। লোহার পাত দোকানের টিনের চালা ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে তাঁর মাথায় আঘাত করে। এতে তাঁর মৃত্যু হয়।

সীমা অক্সিজেন কারখানা থেকে অন্তত ৩০০ মিটার দূরে আল ছাফা রিরোলিং মিল। বিকট শব্দে মিলটি কেঁপে ওঠে। ভেঙে যায় মিলের কাচ।

মিলের শ্রমিক মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার তখন ডিউটি ছিল না। মিলের ভেতরে আমাদের কক্ষে আমি ঘুমাচ্ছিলাম। বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ভয়ে উঠে পড়ি। তাড়াতাড়ি মিলে থেকে বের হয়ে আসি। কিছুক্ষণ পর দেখি কক্ষের কাচ ভেঙে আমার হাত ও পায়ে ক্ষত হয়েছে।’

মিলটির অপর শ্রমিক অলেস ত্রিপুরা তখন কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে মিলের ভেতর ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। কোথা থেকে এমন শব্দ এল, আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। আমাদের তাড়াতাড়ি মিল থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়।’

সীমা অক্সিজেন কারখানার বিপরীতে রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল কারখানা। কারখানাটির টিনের চালা, আচ্ছাদন—সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।

সামনে হারুন নামের এক ব্যক্তির অপর একটি কারখানার চালাও উড়ে গেছে। ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়ালে।

সীমা অক্সিজেনের শ্রমিক মানিকের তখন ডিউটি ছিল না। তিনি আধা কিলোমিটার দূরের বাড়িতে ছিলেন। বিকট শব্দে তিনিও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মানিক বলেন, ‘আমি বেলা দুইটার দিকে কারখানা থেকে চলে আসি। বিকেলে বাসায় বসে বিকট শব্দ শুনি। শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। পরে শুনি, আমাদের কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে।’

বিস্ফোরণে সীমা অক্সিজেন কারখানার লোহার পাত বেঁকে গেছে। কোনো পাত দলা পাকিয়ে গেছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে সিলিন্ডার।

কারখানাটিতে যাওয়ার পথে ৪০০ মিটার পর্যন্ত যতগুলো স্থাপনা দেখা গেছে, তার প্রতিটি কোনো না কোনোভাবে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কদমরসুলের বেশ কয়েকজন অধিবাসী প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের পর তাঁদের কাছে মনে হচ্ছে, পুরো জনপদ যেন বিধ্বস্ত।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘খুব বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দের কারণে আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.