ঠাকুরগাঁওয়ে যুবলীগ নেতা মো. আসাদুজ্জামান ওরফে পুলককে থানায় নিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে কামাল হোসেনকে ওই থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসাদুজ্জামান ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা আসাদুজ্জামানকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সদর থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গতকাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান। মামলার আরজিতে থানায় নিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে বেধড়ক পেটানো এবং বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলা হয়েছে। মামলায় সদর থানার ওসি কামাল হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) খোকা চন্দ্র রায় ও মো. হাফিজ; পরিদর্শক (অপারেশন ইনচার্জ) মো. লতিফ এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মোতালেবকে বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসাদুজ্জামানের শারীরিক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য জেলায় কর্মরত একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।
তবে এর মধ্যেই ওসি কামাল হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রশাসনিক কারণে সদর থানার ওসিকে সেখান থেকে সরিয়ে রংপুর রেঞ্জ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর স্থলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়ারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মামলায় অন্য যাঁদের নাম আছে, তাঁদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে বালুমহালের জন্য চাঁদা দাবি করেছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি কামাল হোসেন। তবে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওসি আসাদুজ্জামানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত ২৯ এপ্রিল রাতে জেলা যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক খালিদ সিরাজ ওরফে রকিকে পুলিশ মারধর করে। খবর পেয়ে আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে আটকের কারণ জানতে চান ওসির কাছে। এ সময় ওসি তাঁকে অকথ্য গালাগাল শুরু করেন। এরপর আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ডেকে এনে আসাদুজ্জামানকে থানায় নিয়ে যান ওসি। থানায় ওসির কক্ষে নিয়ে আসাদুজ্জামানের হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয় এবং চোখে গামছা বাঁধা হয়। এরপর ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। ওই সময় আসাদুজ্জামানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলা হয়, ‘বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা আনতে বল, না হলে তোকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলব।’
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান বাড়িতে এত টাকা নেই জানালে ওসি তাঁর বুকের ওপর বুট দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে ওসিসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা আবারও তাঁকে পেটান। এতে তাঁর হাতের হাড় ভেঙে যায়। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত আড়াইটার দিকে আসাদুজ্জামানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক হাতের এক্স–রে করাতে বললেও তা করা হয়নি। শুধু তিনটি ট্যাবলেট খাইয়ে হাসপাতাল থেকে থানায় আনা হয়। এরপর ওসি পরদিন ১৫১ ধারায় মামলা দিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে দেন।







Add comment