‘এক দফা’ দাবিতে চলতি আগস্ট মাসেই দুই দফা গণমিছিল করেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। এই সপ্তাহের শেষ দিকে আরেকটি যুগপৎ কর্মসূচি আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার রাজধানীতে কয়েক ঘণ্টার ‘প্রতীকী অবস্থান’ কর্মসূচির কথা আলোচনায় আছে।
বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নানা রকম কর্মসূচি আসবে। এটি হবে সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে বিরোধী দলগুলোর চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির শেষ ধাপ। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির নিজস্ব কর্মসূচিও থাকবে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আজ শনিবার বিএনপির ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি রয়েছে। দেশের সব মহানগর ও জেলায় এই পদযাত্রা হবে। এর পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে যুগপৎ কর্মসূচি প্রাধান্য পাবে।
গত ১২ জুলাই সরকার হটানোর ‘এক দফার’ আন্দোলন শুরুর পর ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার চার প্রবেশমুখে ‘অবস্থান’ কর্মসূচি এবং ‘গণমিছিল’ করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। গতকাল চতুর্থ কর্মসূচি হিসেবে ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচিও যুগপৎভাবে করেছে তারা। এর মধ্যে বিএনপি ঢাকার দুই অংশে পৃথক গণমিছিল করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা গণমিছিলে অংশ নেন। সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে মিছিলে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন।
আ.লীগ নেতাদের মুখ শুকিয়ে গেছে
দয়াগঞ্জে গণমিছিল-পূর্ব এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ভয়ে এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারা বুঝে গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি করেছে এবং বলেছে, যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে, যারা জনগণকে ভোট দিতে বাধা দেবে, তাদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। টেলিভিশনে দেখবেন, আর আগের মতো হাসি নেই। আবার যারা বিদেশে বাড়িঘর তৈরি করেছে, ওটাকে কেমন করে বাঁচাবে, তার চেষ্টা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা কথায় কথায় রাতের অন্ধকারে আমাদের ছেলেদের গ্রেপ্তার করেন, আপনাদের বড় বড় অফিসার এখন আর আমেরিকা যেতে পারেন না। তাঁরা যে সহায়সম্পদ তৈরি করেছিলেন বিদেশে, সেগুলোর কী হবে তার জন্য রাতে ঘুম হয় না। আমি খুব পরিষ্কার করে বলি, পুলিশের যাঁরা কর্মকর্তা, যাঁরা পুলিশের লোক, তাঁরা কখনোই অন্যায় ও চুরিচামারির সঙ্গে জড়িত না। জড়িত ওই বড়রা।’
আওয়ামী লীগ লুট করে বাংলাদেশকে শেষ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নতুন আরেকখান কায়দা বাইর করছে.. দেখছেন। কী বলে… পেনশন দেবে, পেনশন স্কিম। মানুষের টাকা চুরি করার আরেকটা ফন্দি বাইর করছে। ওই টাকা চুরি করে ওরা নির্বাচন করতে চায়। মানুষ এবার তাদের দেবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য দেন। গণমিছিলে জয়নুল আবেদিন, মনিরুল হক চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন ভিপি, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, নাসির উদ্দিন অসীম, আবদুল কাদির ভূঁইয়া, সুলতান সালাউদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন।
রাজধানীর দয়াগঞ্জের তিন রাস্তার মোড় থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে খিলগাঁও চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।
তারা বুঝে গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি করেছে এবং বলেছে, যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে, যারা জনগণকে ভোট দিতে বাধা দেবে, তাদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। টেলিভিশনে দেখবেন, আর আগের মতো হাসি নেই। আবার যারা বিদেশে বাড়িঘর তৈরি করেছে, ওটাকে কেমন করে বাঁচাবে, তার চেষ্টা করছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
আ.লীগের অস্ত্র সব ভোঁতা হয়ে গেছে
গুলশান ১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে আ.লীগের অস্ত্র সব ভোঁতা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আজকে শুনলাম পাশের দেশের কিছু কর্মকর্তা নেপালে গেছেন পানি পড়া আনতে। এই পানি পড়া দিয়ে কাজ হবে না। এই সরকারকে সরে যেতে হবে। আমাদের গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে, হয়রানি করে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকারকে মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আন্দোলন–সংগ্রামের মাধ্যমে এই সরকারকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। গণমানুষের অধিকারের কথা বললেই সরকার টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, খুন, গুম ও হত্যা করে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে। আমি বলতে চাই, হুমকিধমকি দিয়ে ১৫ বছর পার করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর কোনো কিছুতেই কাজ হবে না।’
আজকে শুনলাম পাশের দেশের কিছু কর্মকর্তা নেপালে গেছেন পানি পড়া আনতে। এই পানি পড়া দিয়ে কাজ হবে না। এই সরকারকে সরে যেতে হবে। আমাদের গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে, হয়রানি করে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক। গণমিছিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল চারটায় গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বর থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের এক পাশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বিভিন্ন থানা ও ইউনিটের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকেন। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তর। এর পেছনে ছিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের মিছিল। বিকেল পাঁচটার পর মিছিল মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছায়। এ সময় মহাখালী টার্মিনালের সামনে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।







Add comment