সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান (হাবিব) সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত দুই দিন কর্মিসভাসহ প্রচারণায় অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
এর আগে ২ মে সিলেটে ‘ব্যক্তিগত সফরে’ এসে বাগেরহাট-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের (তন্ময়) নগরের আম্বরখানা-ইলেকট্রিক সাপ্লাই সড়কে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ২২ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। দক্ষিন সুরমার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কায়েস্থরাইল এলাকায় শুক্রবার দুপুরেছবি: সংগৃহীত
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন না। এটা নীতি ও নৈতিকতাবহির্ভূত কাজ। নির্বাচন কমিশনও এর দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান গত শুক্রবার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমার কায়েস্থরাইল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের কাছে সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে এলাকায় গণসংযোগ করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় যোগ দিয়ে তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চান। এ ছাড়া তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সরব।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। গত বৃহস্পতিবার রাতেছবি: প্রথম আলো
সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর নির্বাচনী এলাকার ছয়টি ওয়ার্ড মহানগরের অন্তর্ভুক্ত। ফলে তিনি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করায় ভোটারদের প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনায় প্রচারণার সুবিধায় নগরকে যে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে চারটি পৃথক কমিটি করা হয়েছে, এর মধ্যে পূর্বাঞ্চল কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন হাবিবুর রহমান।
কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন, হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকের সমর্থনে ভোট চাইছেন। গণমাধ্যমেও এসব প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকি সংসদ সদস্য নিজেও ফেসবুকে তাঁর এসব কর্মসূচির ছবি শেয়ার করছেন। সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালালেও নির্বাচন কমিশন তা রোধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
সংসদ সদস্যদের প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আমাদের নজরে পড়েনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। তবে এখানকার বাসিন্দা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সবার কাছেই নির্বাচনী আচরণবিধি আমরা পাঠিয়েছি।
যোগাযোগ করলে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি দলের কর্মিসভায় যোগ দেন। কোনো নির্বাচনী প্রচারণার সভায় যোগ দেননি। এ ছাড়া শুক্রবার মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় নামাজ আদায় শেষে এলাকাবাসী তাঁর কাছে ভেড়েন। তবে তিনি কোনো প্রচারণা চালাননি বলে দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আমাদের নজরে পড়েনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। তবে এখানকার বাসিন্দা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সবার কাছেই নির্বাচনী আচরণবিধি আমরা পাঠিয়েছি। সবাইকে তা মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’







Add comment