Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution Limited

ভবিষ্যতে যারা মেডিকেলে পড়তে চাও, এই লেখা তাদের জন্য

এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন রাফসান জামান। পরীক্ষায় ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পাওয়ার সুবাদে তিনি পাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ। চট্টগ্রামের হালিশহরে বেড়ে ওঠা রাফসানের বাড়ি কিন্তু রংপুরে। জন্মের পর বাবা এ কে এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে পুরো পরিবার চলে আসে চট্টগ্রামে। ‘স্বপ্ন নিয়ে’র পাঠকের জন্য রাফসান জানিয়েছেন তাঁর মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন, প্রস্তুতিসহ নানা সময়ের গল্প। ভবিষ্যতে যারা মেডিকেলে পড়তে চাও, রাফসানের লেখা নিশ্চয়ই তোমাদের অনুপ্রাণিত করবে।

এ বছর মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন রাফসান জামান। পরীক্ষায় ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পাওয়ার সুবাদে তিনি পাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ। চট্টগ্রামের হালিশহরে বেড়ে ওঠা রাফসানের বাড়ি কিন্তু রংপুরে। জন্মের পর বাবা এ কে এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে পুরো পরিবার চলে আসে চট্টগ্রামে। ‘স্বপ্ন নিয়ে’র পাঠকের জন্য রাফসান জানিয়েছেন তাঁর মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন, প্রস্তুতিসহ নানা সময়ের গল্প। ভবিষ্যতে যারা মেডিকেলে পড়তে চাও, রাফসানের লেখা নিশ্চয়ই তোমাদের অনুপ্রাণিত করবে।

আমি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়। তখন থেকেই এই পেশাটার প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল। আমার ফুপু একজন চিকিৎসক। তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি। কলেজে ওঠার পর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছাটা আরও পাকাপোক্ত হয়।

ছোটবেলায় চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলে পড়েছি। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। সেখানে একটা নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ালেখা করতে হয়। পাশাপাশি আমি খেলাধুলাও করতাম। ক্রিকেট, ফুটবল—সব ধরনের খেলায় অংশ নিতাম। এসবের মধ্যেই মনে মনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা লালন করে গেছি। এসএসসি পাস করার পর আমার প্রচেষ্টা আরও গতি পায়।

কলেজের প্রথম থেকেই লক্ষ্য স্থির করে ফেলি, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় আমাকে টিকতেই হবে। সে অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিকের সব বইয়ের খুঁটিনাটি পড়তাম। পড়ালেখায় কোনো ছাড় দিতাম না। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছার বিষয়টি মা-বাবা, বোনের পাশাপাশি আমার বন্ধুরা জানত, উৎসাহ দিত। তাদেরও বিশ্বাস ছিল, আমি ঠিকই পারব।

ক্যাডেট কলেজের জীবনে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে থাকতাম। সেখানে মুঠোফোন ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা মুঠোফোনে সময় কাটানোর অভ্যাস হয়নি। সত্যি বলতে গল্পের বই পড়ার অভ্যাসও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে পত্রিকা পড়া হতো। টেলিভিশনও খুব একটা দেখা হতো না। শুধু মাঝেমধ্যে খেলা দেখতাম।

মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতির মধ্যেই ডিসেম্বরে শুরু হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। ফাইনালসহ বেশ কয়েকটি ম্যাচ দেখেছি। কিন্তু পড়ালেখা বাদ দিইনি। আমি কখনো ঘড়ি ধরে পড়িনি। সকাল ও বিকেলে শুধু নিয়ম করে পড়তাম। শুধু মেডিকেলের জন্যই চেষ্টা করে গেছি। সাধারণত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা করে পড়েছি। আর সব সময় পড়ালেখার মধ্যে থেকেছি। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য মাধ্যমগুলোও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।

যারা মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নেবে, তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুরু থেকেই উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞান এবং ইংরেজিটাও জরুরি। বিশেষ করে ইংরেজি অনুশীলন করতে হবে বেশি বেশি। পড়তে হবে বিভিন্ন রেফারেন্স বই। রেফারেন্স বইগুলো বেশ কাজে লাগে।

পাশাপাশি গাইড বই নিয়ে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার অনুশীলন করতে হবে। যত বেশি প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে, তত আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ভুলত্রুটি ধরা পড়বে। কোথায় উন্নতি করতে হবে, বোঝা যাবে।

মেডিকেল প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারেরও ভূমিকা আছে। বিশেষ করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেমন হবে, কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে—এসব ধারণা কোচিং থেকে পাওয়া যায়।

শেষ পর্যন্ত আমি যে আমার স্বপ্ন পূরণের পথে এগোতে পেরেছি, সে জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। মা-বাবা অনেক কষ্ট করেছেন আমার জন্য। ভবিষ্যতে একজন দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। ইচ্ছা আছে নিউরো সার্জারি নিয়ে পড়ব। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করব।

ভবিষ্যতে যারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেবে, তাদের আরও একটা পরামর্শ দিতে চাই। সব সময় মনে রাখতে হবে, আমি পারব। আত্মবিশ্বাস রেখে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। চাপে ভেঙে পড়া যাবে না। আমি যেমন শুরু থেকেই একরকম নিশ্চিত ছিলাম যে আমি টিকব। প্রথম হব, তা অবশ্য ভাবিনি।

আত্মবিশ্বাস থাকলে স্নায়ুর ওপর চাপ কম পড়ে। আর দশটা পরীক্ষার মতোই ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হবে। সুস্থ থাকতে হবে। শরীরের যত্ন নিতে হবে।

পরীক্ষার উত্তর দেওয়ার সময়ও কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার। কোনো একটা প্রশ্ন নিয়ে যেন বেশি সময় ব্যয় না হয়। যত দ্রুত সম্ভব, নিজের জানা বিষয়গুলোর উত্তর আগে দিয়ে দেওয়া ভালো। পরে বাকিগুলো বুঝেশুনে উত্তর দেওয়া যাবে।

মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তুতি নিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগ হলো না—তাতেই যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তা তো নয়। এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা ছেলেবেলায় ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন অন্য কোনো পেশায় অনেক ভালো করছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা যেন আমাদের থাকে, দিন শেষে এটাই মুখ্য।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.