রহস্যে ভরা অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবী। বিচিত্র তার সৌন্দর্য। তার চেয়ে অদ্ভুত ও বিচিত্র হচ্ছে মানুষ। বিপুলা সৌন্দর্যের প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে রোজ। সারা বিশ্বেই চলছে বৃক্ষনিধন আর প্রাণী হত্যার মচ্ছব। অসংখ্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তপ্রায় অজস্র প্রাণী। পৃথিবীর মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে, পৃথিবীর প্রয়োজনেই টিকিয়ে রাখতে হবে প্রাণিকুল। এই টিকিয়ে রাখার আয়োজনে বড় ভূমিকা রাখছে চিড়িয়াখানা। কেবল বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রক্ষার নিরাপদ স্থান হিসেবেই নয়, শিক্ষা, গবেষণা ও বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম এটি। তা ছাড়া প্রাণীপ্রেমীদের জন্য চিড়িয়াখানা অনেকটা কমপ্লিট প্যাকেজের মতো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, গহিন জঙ্গলে, দুর্গম অরণ্যে ছড়িয়ে আছে বিচিত্র সব পশুপাখি। সেসব জায়গায় সশরীর গিয়ে সব তো দেখা সম্ভব নয়। তাই এই দেখার কাজটিকে সহজ করে দেয় চিড়িয়াখানা।

চিড়িয়াখানা ধারণাটির উৎপত্তি চার হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিকদের পশুপাখি খাঁচাবন্দী করে রাখার অভ্যাস ছিল। প্রাচীন মিসর ও রোমান সাম্রাজ্যেও চিড়িয়াখানার খোঁজ পাওয়া যায়। আধুনিক যুগের প্রথম চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৫২ সালে, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। তবে এসবই ছিল রাজকীয় লোকদের বিনোদন, সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার তাতে ছিল না। ১৭৬৫ সালে ভিয়েনার চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর ১৭৭৫ সালে স্পেনের মাদ্রিদে, ১৭৯৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানা। দেশে দেশে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। দেশগুলো নানা দেশের বিচিত্র ও বিরল সব প্রাণী সংগ্রহ করে চিড়িয়াখানা গড়ে তুলতে থাকে।
আজ ৮ এপ্রিল, চিড়িয়াখানা দিবস। চিড়িয়াখানা ধারণা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। অবাধ ও অবারিত প্রকৃতি থেকে ধরে এনে পশুদের খাঁচাবন্দী করাটা ঠিক কতটা প্রকৃতিসম্মত, তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়ে থাকে। কিন্তু হুমকির মুখে থাকা বহু প্রাণী রক্ষা এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে বহু দুর্লভ প্রাণী প্রদর্শন—অন্তত এই দুটো ভাবনা থেকে প্রাণীপ্রেমীদের জন্য চিড়িয়াখানা দারুণ এক স্থান।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে কবীর হোসাইন







Add comment