ভারতের দিল্লির মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির (আপ) দুই নেতা মনীশ সিসোদিয়া ও সত্যেন্দ্র জৈন। দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা এ দুই আপ নেতার পদত্যাগপত্র ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
মনীশ দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সত্যেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। দুজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাঁদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অন্যদের মধ্যে বণ্টন করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
গত রোববার প্রায় ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর মনীশকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। দিল্লিতে আবগারি দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আগেই মামলা হয়েছিল।
অর্থ পাচারের অভিযোগে গত মে মাসে গ্রেপ্তার হন সত্যেন্দ্র। কারাগারে থাকার পরও তিনি মন্ত্রী পদে বহাল ছিলেন। তবে কেজরিওয়ালের নির্দেশে তাঁর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন মনীশ।
গ্রেপ্তার মন্ত্রীরা এখনো কেন দিল্লি সরকারে আছেন—এমন প্রশ্ন তুলছিল বিজেপি। এ অবস্থায় গতকাল আপের এ দুই নেতা পদত্যাগ করেন।
তবে আপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মনীশ-সত্যেন্দ্রের পদত্যাগের মানে এই নয় যে তাঁরা দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। এই পদত্যাগকে প্রশাসনিক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে আপ।
দলীয় সূত্র বলছে, মনীশ-সত্যেন্দ্রর পদত্যাগের পর দিল্লির সরকারে নতুন কোনো মন্ত্রীকে যুক্ত করা হবে না। অন্ততপক্ষে দিল্লি সরকারের আগামী বাজেট পাস হওয়ার আগে কোনো নতুন মন্ত্রী নিয়োগের সম্ভাবনা নেই।
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি ১৮টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মনীশ। এখন এই মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব মন্ত্রী কৈলাস গেহলট ও রাজকুমার আনন্দকে দেওয়া হয়েছে।
মনীশ গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁকে সাত থেকে আট মাস কারাগারে থাকা লাগতে পারে।
পদত্যাগপত্রে মনীশ লিখেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণ হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও মামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তবে তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বানোয়াট।
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালসহ দিল্লির মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা এখন পাঁচজন। কেজরিওয়াল আলাদা করে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেননি। তিনি আপের জাতীয় পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কাজ করেন।
আপের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত মনীশ। তিনি মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। মনীশকে দিল্লি সরকার ও আপের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে মনে করা হয়।
মনীশ অনেক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাতেন বলেই কেজরিওয়াল এত দিন নির্ভার হয়ে দেশজুড়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসতে পেরেছেন। আপ সূত্র বলছে, মনীশ গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিল্লি সরকারের অর্থ, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কেজরিওয়ালকে কিছু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে হতে পারে।
২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আপ। এমন প্রেক্ষাপটে মনীশের গ্রেপ্তার ও পদত্যাগকে আপের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।
Add comment