ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার দক্ষিণের দুটি অঞ্চলে রাতারাতি ড্রোন হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেছে মস্কো। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার চেষ্টা চালানো হয়। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। মস্কোর এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেন।
মস্কো অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিওভ এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, মস্কোর কাছে যে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়েছে, সেটি সম্ভবত কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর লক্ষ্যে পাঠানো হয়েছিল।
মস্কো থেকে ১০০ কিলোমিটারের মতো দূরে গুবাস্তোভো গ্রামের কাছে একটি কারখানা রয়েছে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের। সেখানেই ড্রোনটি ভূপাতিত হয়েছে। তবে এতে তাদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়নি বলে জানিয়েছে গ্যাজপ্রম।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ক্রাসনোদার ও আদিজেয়া অঞ্চলে বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাতে ড্রোন হামলা করার চেষ্টা করে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা দ্রুত এ আক্রমণ প্রতিহত করে। আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দুটি ড্রোনই লক্ষ্যচ্যুত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মাঠে গিয়ে পড়ে।
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, ক্রিমিয়া থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে ক্রাসনোদার অঞ্চলে একটি তেলের ডিপোতে আগুন লাগে। এর আগে সেখানকার আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা যায়।
দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার কিছু সময়ের জন্য সেন্ট পিটার্সবার্গের আকাশে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ। মস্কো জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষা মহড়ার জন্য আকাশপথ বন্ধ রাখা হয়। তবে বেশ কয়েকটি রুশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিমানবন্দরের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় বস্তু শনাক্ত হওয়ায় বিমানবন্দর দ্রুত বন্ধ করা হয়। তবে এ প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সংঘাত অবসানে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত রাশিয়া। তবে নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতা মেনে নিতে হবে ইউক্রেনকে। এ বিষয়ে মস্কো কখনো আপস করবে না। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে দেশটির এক-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া। বর্তমানে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে বাখমুত শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ইউক্রেন ও রুশ বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বাখমুত শহর ঘিরে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ বাহিনী খনিসমৃদ্ধ এই ছোট শহর লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে। তবে আগাম বসন্ত ও বৃষ্টির ফলে যুদ্ধের ময়দান হয়ে উঠেছে কর্দমাক্ত। শহরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা বা ধরে রাখতে মুখোমুখি লড়াই করতে গিয়ে দুই পক্ষই পড়েছে বিপাকে।
বাখমুত শহরটির অবস্থান দোনেৎস্ক অঞ্চলে। এটি দোনেৎস্কের পাশের অঞ্চল লুহানস্ক সীমান্তবর্তী একটি শহর। কিছুদিন ধরেই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। বাখমুত ছাড়া দোনেৎস্কের প্রায় পুরোটা রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে লড়াই করছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার বলেন, ‘বাখমুতের পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। শত্রুরা ক্রমাগত সবকিছু ধ্বংস করছে, যা আমাদের অবস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে এবং প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাখমুতে আমাদের যে সেনারা লড়াই চালাচ্ছে, তারা সত্যিকারের নায়ক।’
Add comment