রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কার্যকারণকে পাশ কাটিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলার উপায় খোঁজার চেষ্টা কতটা সফল হবে, জি–২০ গোষ্ঠীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে সেই পরীক্ষাতেই বসছে ভারত। গতকাল বুধবার নৈশভোজের আসর যদি ইঙ্গিতবাহী হয়, তা হলে সম্মেলনের সাফল্য ঘিরে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
এই সম্মেলনে জি–২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশসহ ৯টি আমন্ত্রিত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। থাকছেন ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে জি–২০ অর্থমন্ত্রী সম্মেলনেও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বড় ছায়া ফেলেছিল। দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও চীন–রাশিয়ার জোরাজুরির জন্য সেই সম্মেলনের পর কোনো যৌথ ঘোষণা দেওয়া যায়নি। দিল্লিতে আজ বৃহস্পতিবার শুরু পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনেও সেই ছায়া গভীরতর হওয়ার আশঙ্কা তীব্র। গতকাল নৈশভোজের আসর ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার মন্তব্য এর ইঙ্গিত দিয়েছে। যৌথ ঘোষণা জারি নিয়ে আগাম কোনো জল্পনায় পররাষ্ট্রসচিব রাজি হননি।
গতকাল নৈশভোজের আয়োজক ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেই আসরে জি–৭ গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন না। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল অবশ্য নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিং গাং গতকাল গভীর রাতে দিল্লি পৌঁছান। ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পৌঁছান আজ সকালে। স্বাভাবিকভাবেই তাই কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নৈশভোজের আসর এড়িয়ে গেলেন কি না। লাভরভ অবশ্য সামান্য সময়ের জন্য নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে রাশিয়ার বিপরীতে পশ্চিমা দুনিয়ার অবস্থান যেমন জোরালো, রাশিয়া তেমনই তাদের বিরুদ্ধাচরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল গতকাল রাতেই স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যুদ্ধকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করতে হবে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকও দিল্লির উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে জানিয়ে দেন, ‘রাশিয়ার অপপ্রচারের’ যোগ্য জবাব দিতে হবে।
রুশবিরোধী পশ্চিমা জোট এই মুহূর্তে তাকিয়ে রয়েছে ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা ও চাতুর্যের দিকে। তাদের চোখে যুদ্ধ থামাতে রাশিয়াকে সুবুদ্ধি দেওয়ার একমাত্র যোগ্য দেশ ভারত। এই সম্মেলন ও সামগ্রিকভাবে জি–২০–এর সভাপতিত্ব ভারতের জন্য কূটনৈতিক দক্ষতার এক বড় পরীক্ষা হয়ে উঠেছে।
Add comment