Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

‘নিপীড়িত’ রোমানীয় পরিবারের কানাডায় জীবন গড়ার স্বপ্ন নদীতে বিলীন

নতুন করে জীবন সাজাতে পাঁচ বছর আগে রোমানিয়া ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমান এক দম্পতি। তবে তাঁদের নতুন জীবন গড়ার সে স্বপ্ন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের কাছে সেন্ট লরেন্স নদীর শীতল পানি থেকে এ দম্পতি এবং তাঁদের এক ও দুই বছর বয়সী দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, ভারতীয় একটি পরিবারের সঙ্গে রোমানিয়ার এ পরিবারটি ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে চেয়েছিল।

নতুন করে জীবন সাজাতে পাঁচ বছর আগে রোমানিয়া ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমান এক দম্পতি। তবে তাঁদের নতুন জীবন গড়ার সে স্বপ্ন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের কাছে সেন্ট লরেন্স নদীর শীতল পানি থেকে এ দম্পতি এবং তাঁদের এক ও দুই বছর বয়সী দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, ভারতীয় একটি পরিবারের সঙ্গে রোমানিয়ার এ পরিবারটি ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে চেয়েছিল।

পাঁচ বছর আগে রোমানিয়া থেকে টরন্টোতে পাড়ি জমান ফ্লোরিন ইওরদাচে ও তাঁর স্ত্রী ক্রিস্টিনা (মোনালিসা) জেনাইদা। তাঁদের দুজনেরই বয়স ২৮ বছর। এ দম্পতি রোমানিয়ার রোমা জনগোষ্ঠীর সদস্য। রোমানিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশে এ জনগোষ্ঠীর মানুষ নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার। ২০১৮ সালে রোমানিয়ার নাগরিকদের ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ দেয় কানাডা। তখন দেশটির অনেক মানুষ কানাডায় পাড়ি জমান। ফ্লোরিন ইওরদাচে এবং ক্রিস্টিনা মোনালিসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সে ঢলের সঙ্গেই টরন্টোতে পৌঁছান।

আইনজীবী পিটার ইভিয়ানি বলেন, রোমা জনগোষ্ঠীর মানুষদের অনেকেই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ইওরদাচেও তেমনই একজন। পড়াশোনা জানা ছিল না বলে ভালো কোনো চাকরি জোটেনি। এমন অবস্থায় তিনি নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

আইনজীবী ইভিয়ানি বলেন, কিশোর বয়সে তাঁকে (ইওরদাচে) এবং তাঁর পরিবারকে নানা সময়ে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। পরে তরুণ বয়সেও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। যখন ভিসামুক্তভাবে কানাডায় সফরের অনুমতি দেওয়া হলো, তখন তিনি দেশ ছেড়ে সেখানে চলে যান।

কানাডায় অভিবাসন চেয়ে প্রথম করা আবেদনের শুনানিতে হাজির হতে পারেননি ইওরদাচে। এতে আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। ইভিয়ানি বলেন, ওই সময়ে ইওরদাচে ও মোনালিসার অন্য স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পরবর্তী সময়ে ইভিয়ানি জানতে পারেন, ২০১৮ সালে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ইওরদাচেকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। ফ্লোরিডায় স্থায়ী হওয়া স্বজনদের সঙ্গে একত্র হতে তিনি এমন প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২০ সালে আবারও কানাডায় আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন ইওরদাচে। তবে এক বছর পর স্ত্রী মোনালিসা ও প্রথম সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। আবারও তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।

টরন্টো স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন স্টেট থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাঁরা কানাডায় ফিরে যান। সেখানে ইওরদাচেকে আটক করা হয়।

আটক অবস্থায় দেওয়া জবানবন্দিতে ইওরদাচে দাবি করেন, অভিবাসনের আশায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেননি, তাঁর পরিবার কাছের একটি পার্কে গিয়েছিল এবং ভুল করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তাঁদের খুঁজতেই সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক কর্তৃপক্ষের এক বিচারক তখন তাঁর কথা বিশ্বাস করেননি।

গত বছর ইওরদাচের পরিবারের সঙ্গে আইনজীবী ইভিয়ানির আবারও যোগাযোগ হয়। তখন ওই দম্পতির পক্ষ থেকে তাঁদের বিতাড়িত না করার জন্য কানাডীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান তিনি। ওই দম্পতিকে বিতাড়িত করা হলে তাঁরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন, তা আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মার্চের শেষের দিকে ইওরদাচে জানতে পারেন, আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সেন্ট লরেন্স নদীতে এ দম্পতির মরদেহ পাওয়া গেছে। কানাডায় জন্ম নেওয়া তাঁদের এক ও দুই বছর বয়সী দুই সন্তানের মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের পাশাপাশি ভারতীয় একটি পরিবারের কয়েকজন সদস্যের মরদেহও খুঁজে পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন প্রাভিন চৌধুরী (৫০), তাঁর স্ত্রী দীক্ষা (৪৫), তাঁদের ছেলে মিত (২০) ও মেয়ে বিধি (২৪)। তাঁরা ভারতের গুজরাট থেকে এসেছিলেন।

সেন্ট লরেন্স নদী
সেন্ট লরেন্স নদী

ধারণা করা হচ্ছে, দুটি পরিবারই নৌকায় করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে নৌকাডুবির ঘটনায় তারা মারা যায়। ঘটনার পর থেকে ওই নৌকার মালিক নিখোঁজ আছেন। তাঁর নাম কেসি ওকস (৩০)। পুলিশের ধারণা, এ ঘটনার সঙ্গে কেসি জড়িত।
আইনজীবী ইভিয়ানি বলেন, পরিবারটি যে ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তা তাঁর জানা ছিল না। তবে তাঁর ধারণা, নিশ্চিতভাবে বিতাড়িত হতে হবে জেনে পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে একত্র হতে চেয়েছিল।

ইভিয়ানি আরও বলেন, পরিবারের জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে ইওরদাচে তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। বিশেষ করে তাঁর দুই সন্তানের জন্মের পর। ইওরদাচে চাননি, রোমানিয়ায় তিনি যে ধরনের নিপীড়ন-বঞ্চনার শিকার হয়েছেন, সে একই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁর সন্তানেরা পড়ুক।

ওই আইনজীবীর ধারণা, ইউরদাচের সিদ্ধান্তটির মধ্যে কোনো স্বার্থপরতা ছিল না।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পারাপারের ঘটনা বেড়েছে। ইওরদাচে এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় আকওয়েসাসনে এলাকা থেকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভৌগোলিক কারণে এলাকাটি মানব পাচারকারীদের কাছে খুব পছন্দের। এলাকাটি কানাডার অন্টারিও, কুইবেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের কাছে অবস্থিত।

গত জানুয়ারি থেকে এ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৪৮ বার অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছে, যা পুলিশ ঠেকিয়ে দিয়েছে।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.