Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

এশিয়াতে ন্যাটোর ভুল পথ, ফাঁদে পড়ছে ইউরোপ

চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ সামরিক জোটটির ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত দিক থেকে বড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। চীন ও ন্যাটোর মধ্যে এতে উত্তেজনা বাড়তে বাধ্য। একই সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে ওঠার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

চীনকে ধরার কৌশল ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাস্তব কোনো লাভ বয়ে আনবে না। এটি অবধারিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করবে। ওয়াশিংটন মরিয়াভাবে বৈশ্বিক আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।  

যদিও পূর্ব এশিয়া থেকে ন্যাটো তাদের নতুন সদস্য নিচ্ছে না। কিন্তু ওই অঞ্চলে ‘সমমনা’ দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে ন্যাটো।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড—এই দেশগুলো ন্যাটোর ‘বৈশ্বিক অংশীদার’ থেকে সম্পর্কের নতুন আরেক স্তরে প্রবেশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেটিকে ন্যাটো নাম দিয়েছে, আইটিপিপি বা ইনডিভিজুয়ালি টেইলরড পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম।

চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ সামরিক জোটটির ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত দিক থেকে বড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। চীন ও ন্যাটোর মধ্যে এতে উত্তেজনা বাড়তে বাধ্য। একই সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে ওঠার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

চীনকে ধরার কৌশল ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাস্তব কোনো লাভ বয়ে আনবে না। এটি অবধারিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করবে। ওয়াশিংটন মরিয়াভাবে বৈশ্বিক আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।  

যদিও পূর্ব এশিয়া থেকে ন্যাটো তাদের নতুন সদস্য নিচ্ছে না। কিন্তু ওই অঞ্চলে ‘সমমনা’ দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে ন্যাটো।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড—এই দেশগুলো ন্যাটোর ‘বৈশ্বিক অংশীদার’ থেকে সম্পর্কের নতুন আরেক স্তরে প্রবেশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যেটিকে ন্যাটো নাম দিয়েছে, আইটিপিপি বা ইনডিভিজুয়ালি টেইলরড পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম।

ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করলে ন্যাটোর সঙ্গে জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক বাড়তে শুরু করে। গত জুলাই মাসে লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা সামরিক জোটটির প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ  জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের কোনো অংশীদারই জাপানের মতো এতটা ঘনিষ্ঠ নয়।’

যুদ্ধে আবেগই প্রভাব বিস্তার করে। বিস্তৃত ভূগোলজুড়ে সম্প্রসারণের যে বিপদ, ইউক্রেন যুদ্ধের পর সেটা বুঝতে পারছে না ইউরোপ। পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে ন্যাটোর নিরাপত্তার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত হলেও পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে তাদের গভীর সামরিক সম্পৃক্ততার কোনো কারণ নেই। এটা শুধু চীনের সঙ্গে তাদের শত্রুতাই বাড়াবে।

আরও বলিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের পদক্ষেপ হিসেবে টোকিওতে ন্যাটো লিয়াজোঁ কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, এশিয়ার ক্ষেত্রে যা প্রথম। কিন্তু ন্যাটো ও চীনের মধ্য উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালা হবে সেই আশঙ্কা থেকে ন্যাটো পরিকল্পনাটি আপাতত আলমারিতে তুলে রেখেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করেছেন যে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ হবে ‘বড় ধরনের ভুল’।

আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো সম্প্রসারণের লক্ষ্য হচ্ছে, ‘সমুদ্র নিরাপত্তা, নতুন প্রযুক্তি, সাইবার, জলবায়ু পরিবর্তন’—এসব বিষয়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণ। কিন্তু বাস্তবে এই সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনকে ঠেকানো। ন্যাটো এখন খোলাখুলিভাবে বলছে, ‘আমাদের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের ওপর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে’।

কিশিদার সঙ্গে বৈঠকে স্টলটেনবার্গ ‘চীনের বিশাল সামরিক আয়োজন’ এবং ‘পারমাণবিক শক্তির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্টলটেনবার্গের এই উদ্বেগ নিশ্চিতভাবেই কিশিদার কানে মন্ত্রের মতো শোনাবে। কেননা ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে কিশিদা নিরলসভাবে চেষ্টা করে চলেছেন।

কিন্তু পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটো তার সামরিক ভূমিকা সম্প্রসারণ করলে তাতে ইউরোপের নিরাপত্তা কীভাবে লাভবান হবে তা বলা মুশকিল। কেননা এতে নির্দিষ্ট করেই বেইজিংকে শত্রুভাবাপন্ন করে তোলা হবে। এ ব্যাপারে বিস্ময়ের কিছু নেই যে ন্যাটোর এই কথাবার্তা ও পদক্ষেপে সোচ্চারভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন।

চীনের ভয় হচ্ছে, ন্যাটোর সঙ্গে একই ছাতার নিচে সমবেত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো আরও বেশি চীনবিরোধী চরিত্র ধারণ করবে। বেইজিংয়ের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে ন্যাটো বলেছে, ওই অঞ্চলে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য থেকে নয় এবং ধরনের দিক থেকে আত্মরক্ষামূলক।

আত্মরক্ষামূলক উদ্দেশ্য থেকে এটি করা হচ্ছে—ন্যাটোর এই দাবি বেইজিংকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের সব বিশেষজ্ঞই এ ব্যাপারে একমত যে অন্য রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা অসম্ভব একটা ব্যাপার।

‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়’—এ ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির পেছনে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্ট করেই সাধারণ জ্ঞানের অভাবের কথা বলে থাকেন। এটিকে তাঁরা নিরাপত্তা প্রহেলিকা (দুই পক্ষই যখন মনে করে সামরিক শক্তি বাড়ানোটাই নিরাপত্তার রক্ষাকবচ) বলেন।

পূর্ব এশিয়ায় ন্যাটোর এই মাখামাখি সম্পর্ককে চীনের নেতারা যদি হুমকি বলে মনে করতে থাকেন তাহলে তারা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সামরিক শক্তি বাড়াবে। নতুন জোট গড়ে তুলবে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন যদি এখন রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে, তাহলে ইউরোপের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়বে।

কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর নিরাপত্তা প্রহেলিকা তত্ত্বে আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। আমরা যদি নিরাপত্তা প্রহেলিকার তত্ত্ব মেনে নিই, তাহলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ চেষ্টার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করেছে—এই অজুহাত মেনে নিতে হবে।

এটা অবশ্যই সত্য যে রাশিয়ার আগ্রাসন অবৈধ ও অন্যায্য। কিন্তু এটাও সত্য যে প্রতিটি নতুন সদস্য আত্মরক্ষার কথা বলে ন্যাটোতে যুক্ত হলেও ন্যাটো সম্প্রসারণকে হুমকি বলে মনে করেছিল রাশিয়া।

যুদ্ধে আবেগই প্রভাব বিস্তার করে। বিস্তৃত ভূগোলজুড়ে সম্প্রসারণের যে বিপদ, ইউক্রেন যুদ্ধের পর সেটা বুঝতে পারছে না ইউরোপ। পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে ন্যাটোর নিরাপত্তার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত হলেও পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে তাদের গভীর সামরিক সম্পৃক্ততার কোনো কারণ নেই। এটা শুধু চীনের সঙ্গে তাদের শত্রুতাই বাড়াবে।

এ বছরের শুরুতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ সঠিকভাবেই বলেছেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ হবে ইউরোপের জন্য ফাঁদ ছাড়া কিছু নয়।

উলভ হানসেন সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক
লাইনান হাগস্ট্রম সুইডেনের প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.