Nazihar News Network
News frzom Nazihar It Solution

ইউক্রেনকে রেখে রাশিয়াকে কেন বেছে নিয়েছে এতগুলো গণতান্ত্রিক দেশ

ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনেক দেশ বিকল্প নিরপেক্ষতার পথ নিয়েছে।

বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যাচ্ছে, রাশিয়াকে নিন্দাকারী দেশের সংখ্যা কমেছে। বতসোয়ানা তার ইউক্রেনপন্থী অবস্থান বদলে পরিষ্কারভাবে রাশিয়ার সমর্থনে অবস্থান নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে রাশিয়ার দিকে হেলে পড়েছে এবং রাশিয়াকে নিন্দা করার আগের অবস্থান থেকে সরে কলম্বিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। একই সময় বড়সংখ্যক দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা যায়। আফ্রিকান ইউনিয়ন মস্কোর প্রতি ‘অতিসত্বর অস্ত্রবিরতির’ আহ্বান জানানো সত্ত্বেও মহাদেশটির বেশির ভাগ দেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে অনেক পর্যবেক্ষকের যুক্তি হলো ঠান্ডা যুদ্ধকালে আফ্রিকার দেশগুলোর বামঘেঁষা সরকারগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থক ছিল, সে ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে। অন্যদের যুক্তি হলো আফ্রিকার দেশগুলোর বর্তমানের অনীহা জন্ম হয়েছে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপের ইতিহাস থেকে। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো গোপনে হস্তক্ষেপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।

ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনেক দেশ বিকল্প নিরপেক্ষতার পথ নিয়েছে।

বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যাচ্ছে, রাশিয়াকে নিন্দাকারী দেশের সংখ্যা কমেছে। বতসোয়ানা তার ইউক্রেনপন্থী অবস্থান বদলে পরিষ্কারভাবে রাশিয়ার সমর্থনে অবস্থান নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে রাশিয়ার দিকে হেলে পড়েছে এবং রাশিয়াকে নিন্দা করার আগের অবস্থান থেকে সরে কলম্বিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। একই সময় বড়সংখ্যক দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা যায়। আফ্রিকান ইউনিয়ন মস্কোর প্রতি ‘অতিসত্বর অস্ত্রবিরতির’ আহ্বান জানানো সত্ত্বেও মহাদেশটির বেশির ভাগ দেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে অনেক পর্যবেক্ষকের যুক্তি হলো ঠান্ডা যুদ্ধকালে আফ্রিকার দেশগুলোর বামঘেঁষা সরকারগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থক ছিল, সে ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে। অন্যদের যুক্তি হলো আফ্রিকার দেশগুলোর বর্তমানের অনীহা জন্ম হয়েছে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপের ইতিহাস থেকে। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো গোপনে হস্তক্ষেপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে ভারত যাতে স্থায়ী সদস্য হতে পারে, সেই চেষ্টাও করেছে রাশিয়া। ভারতের অস্ত্রবাণিজ্যে প্রধান সহযোগী রাশিয়া। ১৯৯২ থেকে ২০২১ সাল ভারতের মোট আমদানি করা অস্ত্রের ৬৫ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধ শুরুর পর ভারত ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে গড়ে যেখানে ৫০ হাজার ব্যারেল তেল কিনত, ২০২২ সালের জুন থেকে তা বেড়ে ১০ লাখ ব্যারেল হয়েছে।

রাশিয়ার ওপর দোষ চাপানোর এ অনীহা শুধু আফ্রিকাতেই সীমাবদ্ধ নেই। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশ ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। এখন পর্যন্ত লাতিন দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল জাতিসংঘের আনা ইউক্রেনের পক্ষের বেশ কিছু প্রস্তাব সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু তারা সরাসরি রাশিয়াকে নিন্দা জানায়নি।

জাতিসংঘের মধ্যে বলিভিয়া, কিউবা, এল সালভাদর ও ভেনেজুয়েলা রাশিয়ার ওপর চাপানো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার জার্মানির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে মেক্সিকো।

এশিয়াতেই এ বিভক্তির প্রমাণ রয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া খোলাখুলিভাবেই রাশিয়াকে নিন্দা জানালেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে সেটা করেনি। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের কৌশলগত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান নিয়েছে দেশটি। চীন জাতিসংঘে তার প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য থাকাকালে ভারত এই সংঘাতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।

নিরপেক্ষতার রাজনীতি

এ ধরনের সাবধানী ও নিরপেক্ষ অবস্থান ঠান্ডা যুদ্ধকালে যে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার প্রভাবেই তৈরি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ‘নিজস্ব উপায়ে’ পরাশক্তির সেই সংঘাতের সঙ্গে লড়াই করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিমাদের প্রভাববলয়ের বাইরে উন্নয়নশীল দেশগুলো পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক সমীক্ষা বলছে, রাশিয়াকে দেওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞায় দুটি কারণে অনেক দেশ সমর্থন করেনি। এক. পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দেশগুলোর স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা। দুই. প্রতিবেশী দেশের শত্রু না হতে চাওয়া।

জোটনিরপেক্ষতার অবস্থান দেশগুলোকে পশ্চিম ও রাশিয়ার মধ্যকার বাড়তে থাকা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এড়িয়ে চলার দিশা দেখাচ্ছে। এ কারণেই হয়তো, অনেক গণতান্ত্রিক দেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার অবস্থান গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসা ‘দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলার’ যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেখানে নিরপেক্ষতার এ নীতিই স্পষ্ট হয়েছে।

যাহোক, দেশগুলো যখন রাশিয়াকে নিন্দা জানানোর বিপক্ষে অবস্থায় নেয়, তার পেছনে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে।

ব্রাজিল

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর একেবারে গোড়া থেকে ব্রাজিল বাস্তবমুখী কিন্তু দ্বিমুখী অবস্থান বজায় রেখে চলেছে। কৃষি ও জ্বালানি খাতের কথা মাথায় রেখেই ব্রাজিল এ অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিল বিশ্বের অন্যতম প্রধান কৃষিপণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ। সে কারণেই তাদের প্রচুর সার প্রয়োজন হয়। ২০২১ সালে ব্রাজিল রাশিয়া থেকে ৫৫৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে এর মধ্যে সারই ছিল ৬৪ শতাংশ। ব্রাজিল যে পরিমাণ সার আমদানি করে, তার ২৩ ভাগ আসে রাশিয়া থেকে।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার গ্যাস কোম্পানি গাজপ্রম ব্রাজিলের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। দুই দেশের জ্বালানি খাতে সম্পর্ক বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত এটি। এর ফলে ব্রাজিলে তেল–গ্যাস উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে রাশিয়ার প্রভাব বাড়বে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত এ সহযোগিতা সম্প্রসারিত হতে পারে।

এ সহযোগিতা থেকে ব্রাজিলের তেল খাত অনেক বেশি লাভবান হতে পারে। ব্রাজিল আশা করছে, তারা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হবে। এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রাশিয়া থেকে ব্রাজিলে ডিজেলের রপ্তানি নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। রাশিয়ার তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, পরিমাণটা তার সমান। ডিজেলের এই বিশাল প্রাপ্তিতে ব্রাজিলের কৃষি খাত লাভবান হয়েছে।

ভারত

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ঠান্ডা যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বে রাশিয়া ও ভারত একই ধরনের কৌশলগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে চলেছে। দুই হাজারের দশকের প্রথম দিকে ভারত-রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের সময় রাশিয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটি বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করা করা।

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে ভারত যাতে স্থায়ী সদস্য হতে পারে, সেই চেষ্টাও করেছে রাশিয়া। ভারতের অস্ত্রবাণিজ্যে প্রধান সহযোগী রাশিয়া। ১৯৯২ থেকে ২০২১ সাল ভারতের মোট আমদানি করা অস্ত্রের ৬৫ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধ শুরুর পর ভারত ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে গড়ে যেখানে ৫০ হাজার ব্যারেল তেল কিনত, ২০২২ সালের জুন থেকে তা বেড়ে ১০ লাখ ব্যারেল হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা

ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির ঠিক আগে, দক্ষিণ আফ্রিকা রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেয়। এ মহড়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ধরনের প্রাপ্তি রয়েছে। নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা অর্জন এবং নৌবাহিনীতে অর্থায়ন। আরও বৃহৎ পরিসর থেকে বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার নিরপেক্ষ অবস্থানের পেছনে বাণিজ্য স্বার্থ রয়েছে।

আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। মহাদেশটিতে পারমাণবিক বিদ্যুতেরও সরবরাহ করে রাশিয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মহাদেশটির ৩০ শতাংশ খাদ্যশস্যের জোগান আছে রাশিয়া থেকে। আফ্রিকার চারটি দেশে রাশিয়ার মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশ কেন্দ্রীভূত, এর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ আফ্রিকা।

ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়ে দিল, অন্য গণতান্ত্রিক দেশ বিপদে পড়ার পরও জোটনিরপেক্ষ অবস্থান এখনো জনপ্রিয় বিকল্প। ভারতের মতো দেশগুলোর রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

  • হোসে কাবালেরো, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ
    এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.