টেলিভিশন বা টিভি প্রযুক্তিতে গত তিন দশকে অনেক উন্নতি হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির সিআরটি (ক্যাথোড রে টিউব) টিভি সেট এখন একপ্রকার বিলুপ্ত বলা যায়। অথচ দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষ এ টিভিই দেখেছিলেন। একসময় সিআরটি টিভিকে হটিয়ে বাজারে আসে এলসিডি ও এলইডি টিভি। আবার এলসিডি-এলইডির জায়গাটি এখন দখল করছে স্মার্ট টিভির নানা সংস্করণ।
শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, টিভিকে এখন বৃহৎ পরিসরে শিক্ষামূলক ও পেশাগত বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। টিভি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও টিভিকে কতটা পাতলা ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করা যায়, সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান সোহেল কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ টিভিই স্মার্ট ধরনের। আগে শুধু ডিশ সংযোগ দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেল দেখা যেত। এখন সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব দেখা যায়। এ কারণে দিন দিন স্মার্ট টিভির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বলা যায়, টেলিভিশন এখন ড্রয়িং রুম ও বেডরুমের ডেকোরেশনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়লে টেলিভিশনের আবেদন কমবে—অনেকের মাঝে এমন ধারণা ছিল। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। কারণ, এখন টেলিভিশনও স্মার্ট হয়ে গেছে। বলা হয়ে থাকে, একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে যতগুলো কাজ করা যায়, তার সব কটি স্মার্ট টিভির মাধ্যমেও করা সম্ভব হয়। ফলে টেলিভিশনের আবেদন না কমে বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন ধারণা অনুমাননির্ভর নয়। পণ্যটির বাজার তথ্য দেখলেও এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। টেলিভিশনের বাজারসংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, দেশে বছরে কমবেশি ১৮ লাখ টেলিভিশন বিক্রি হয়। এর একটা বড় অংশই স্মার্ট টিভি।
টিভি বিক্রিটা সাধারণত উৎসবকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজনের সময় টিভি বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। সে সময় দেশে টিভি বিক্রি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এশিয়া কাপ ক্রিকেট ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সময় টেলিভিশন বিক্রি খুব বৃদ্ধি পাবে। তবে সারা বছরই কমবেশি টেলিভিশন বিক্রি হয়, যা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে বৃদ্ধি পায়।
শিশুদের জন্যও এখন বিনোদন ও শিক্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে স্মার্ট টিভি। ট্রান্সকম ডিজিটালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মাহবুব হাসান জানান, করোনার সময় থেকে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস ও দূরবর্তী বিভিন্ন শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় স্মার্ট টিভি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ভিডিও কলে কথা বলাসহ বিভিন্ন যোগাযোগের ক্ষেত্রেও স্মার্ট টিভির ব্যবহার রয়েছে।
সারা দেশে বিদ্যুতায়ন বেড়েছে। পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আমদানির পাশাপাশি দেশেও কিছু কোম্পানি টেলিভিশন তৈরি করছে। ফলে গ্রাহকেরা এখন তুলনামূলক কম খরচে টেলিভিশন কিনতে পারছেন।
দেশে টেলিভিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এতে ধীরে ধীরে টেলিভিশনের আমদানিনির্ভরতা কমছে। দেশে টিভি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন, ইলেকট্রোমার্ট, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, সনি, ইলেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এসকোয়্যার ইলেকট্রনিকস, র৵াংগস, এলজি প্রভৃতি। স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সিঙ্গারসহ বিদেশি একাধিক কোম্পানি এ দেশে কারখানা স্থাপন করেছে।
ইলেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মোবারক হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক পণ্যের বিকাশ ঘটাতে সরকার দেশে কারখানা স্থাপন ও পণ্য উৎপাদনে শুল্ক সুবিধা দিচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য আমদানিতে বেশি পরিমাণে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে দেশীয় কোম্পানি হোক কিংবা বিদেশি—বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য দিতে হলে দেশের অভ্যন্তরে কারখানা স্থাপন করে পণ্য তৈরি করতে হবে।
দেশে গত এক বছরে অবশ্য টেলিভিশনের দাম বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারিকালের বিধিনিষেধ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রযুক্তিপণ্যের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের দাম অনেক বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন খাতে।







Add comment