Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution Limited

গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা 

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তারিফুল ইসলাম উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাই চাকরি-বাকরির দিকে না ছুটে নিজের বাড়িতেই গরুর খামার গড়ে তোলেন। দুই ভাই মিলে ‘তারিফ ডেয়ারি ফার্ম’ নামে গরুর খামার করেন। তা–ও ১৮ বছর আগের কথা।

খামারটিতে বর্তমানে ৩৬টি দুধেল গাভিসহ ৬৬টি গরু রয়েছে। তাতেও নাকি পোষাচ্ছে না। তারিফুল বলেন, গোখাদ্যের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেই তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি। যে কারণে খামারের গরু কমিয়ে লোকসান সামাল দিতে হচ্ছে।

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তারিফুল ইসলাম উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাই চাকরি-বাকরির দিকে না ছুটে নিজের বাড়িতেই গরুর খামার গড়ে তোলেন। দুই ভাই মিলে ‘তারিফ ডেয়ারি ফার্ম’ নামে গরুর খামার করেন। তা–ও ১৮ বছর আগের কথা।

খামারটিতে বর্তমানে ৩৬টি দুধেল গাভিসহ ৬৬টি গরু রয়েছে। তাতেও নাকি পোষাচ্ছে না। তারিফুল বলেন, গোখাদ্যের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেই তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি। যে কারণে খামারের গরু কমিয়ে লোকসান সামাল দিতে হচ্ছে।

যশোরের শার্শা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের উদ্যোক্তা তারিফুল ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মাস ছয়েক আগেও তাঁর খামারে ৪৪টি গাভি ছিল। গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আটটি গাভি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। শুধু তারিফুলই নয়, লোকসান কমাতে তাঁর মতো অন্য অনেক উদ্যোক্তাও খামারে গরুর সংখ্যা কমাতে শুরু করেছেন।

সম্প্রতি শার্শা উপজেলার নারায়ণপুরসহ নিশ্চিন্তপুর ও শেয়ালঘোনা গাতিপাড়া গ্রামের কয়েকটি গরুর খামারে গিয়ে এবং আরও গোটা দশেক খামারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানা গেছে, দুগ্ধ খামার ও মোটাতাজাকরণ খামারের উদ্যোক্তারা এখন ভালো নেই। প্রায় প্রতিটি খামার থেকেই গরু বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানান, গোখাদ্য ও ভিটামিন-ওষুধের দাম কমে নাগালের মধ্যে না এলে এ সংকট আরও তীব্র হবে। এতে কোরবানির ঈদে এ এলাকা থেকে পশুর সরবরাহ কমবে।

সব মিলিয়ে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু দুধের দাম বেড়েছে লিটারে দুই থেকে চার টাকা। লোকসান সামাল দিতে গত ছয় মাসে খামারের আটটি গাভি বিক্রি করতে হয়েছে।

তারিফুল ইসলাম, উদ্যোক্তা, শার্শা উপজেলা, যশোর 

খামারের অবস্থা জানতে চাইলে তারিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৮ বছর ধরে গরুর খামার করছি। কিন্তু বর্তমানে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে খামার টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গোখাদ্য, ভিটামিন-ওষুধসহ খামারের সব ধরনের সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরিও বাড়াতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু দুধের দাম বেড়েছে লিটারে দুই থেকে চার টাকা। লোকসান সামাল দিতে গত ছয় মাসে খামারের আটটি গাভি বিক্রি করতে হয়েছে।’

পার্শ্ববর্তী নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জে জে ডেইরি খামারের উদ্যোক্তা মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে খামারে ছয়টি গাভিসহ ১৫টি গরু রয়েছে। দুই মাস আগে ছিল ৩০টি গরু। খরচ চালাতে না পেরে ১৫টি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। চার মাস আগে ৫৫ কেজির প্রতি বস্তা গোখাদ্য ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে কিনেছি। এখন সেই খাদ্য ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অথচ দুধের দাম পাচ্ছি ৪০ থেকে ৪২ টাকা প্রতি লিটার। তাহলে খামার টিকিয়ে রাখব কেমনে?’

শেয়ালঘোনা গাতিপাড়া গ্রামের মো. কওছার বলেন, ‘চারটি গাভি ছিল। মাসখানিক আগে দুইটা বিক্রি করে দিয়েছি। এখন যে দুইটা আছে, তার একটা দৈনিক চার লিটার করে দুধ দিচ্ছে আর অন্যটা সামনে বাচ্চা দেবে। তা না হলে এই দুইটাও হয়তো বিক্রি করে দিতাম। খরচের জোগান দিয়ে পারা যাচ্ছে না।’

দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য যশোরে শার্শা উপজেলা সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবেই পরিচিত। এ জন্য এখানে দুগ্ধ শীতলীকরণের তিনটি কেন্দ্র রয়েছে। এর একটি বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্কভিটা) এবং অপর দুটি যথাক্রমে ব্র্যাক ও প্রাণের।

মিল্কভিটার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, তারা শার্শা উপজেলার অন্তত ৩০টি খামারের গরুর দুধ সংগ্রহ করে। দৈনিক দেড় হাজার লিটারের মতো দুধ পাওয়া যায়। শীতলীকরণের পর সেই দুধ তারা ঢাকায় পাঠায়। 

মিল্কভিটার দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুধে ননির পরিমাণ ৪ শতাংশ পাওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রতি লিটারে দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৪৫ টাকা। এ কারণে খামারিরা এখন স্থানীয় মিষ্টির দোকানের চেয়ে আমাদের কেন্দ্রে দুধ বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।’

মিল্কভিটার এই কেন্দ্রের প্রায় সমপরিমাণ দুধ ব্র্যাক ও প্রাণ গ্রুপের শীতলীকরণ কেন্দ্রগুলো সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে দেখা গেছে, শার্শায় বর্তমানে দুধেল গাভিসহ মোট ৮৮ হাজার ৭৩৪টি গরু রয়েছে। 

এদিকে মাঠপর্যায়ে গরুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় কোরবানির সময় গরুর সরবরাহ ঠিক থাকবে কি না, জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে কোনো বছর গরুর সংকট হয়নি। আশা করি, এ বছরও হবে না। তবে এটা ঠিক যে গোখাদ্যসহ খামারের অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্যোক্তারা সংকটে পড়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সংকট নিরসন করতে হবে।’

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.